আরিফ খাঁন, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ১৫ আগস্ট, ২০২২

ভরা মৌসুমে পাট ক্রয় কেন্দ্রে সুনসান নীরবতা

উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পাবনা বেড়া বাজার পাট ক্রয়কেন্দ্রে ভরা মৌসুমে এখন সুনসান নীরবতা। অথচ একসময় কয়েক হাজার শ্রমিক ও পাট ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে থাকত এ হাট। পাটকল বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তেমনি কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখানকার শত শত শ্রমিকেরা।

পাট শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় প্রচুর পাট উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত পাটের ওপর ভিত্তি করে বেড়ায় গড়ে উঠেছিল উত্তরাঞ্চলের প্রসিদ্ধ পাট ব্যবসাকেন্দ্র। এক সময় বেড়ায় বিজেএমসির ৮-১০টি পাটকলের পাট ক্রয়কেন্দ্র ছিল। বেড়া উপজেলার বেড়া বাজারের পাট ক্রয়কেন্দ্রের খ্যাতি ছিল উত্তরাঞ্চল জুড়ে। একসময় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রায় সবগুলো পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র ছিল এখানে। বেসরকারি পর্যায়েরও কয়েকটি পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র ছিল এখানে। এখান থেকে পাট কিনে কলগুলো কারখানায় নিয়ে যেত। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ‘পাটপট্টি’ নামে পরিচিত এই ক্রয়কেন্দ্রে এখনো অর্ধশতাধিক পাটের গুদাম রয়েছে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা আরও জানান, নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে বেড়ার পাট ক্রয়কেন্দ্রটি স্থবির হতে শুরু করে। সে সময় ইছামতী নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেওয়ায় ক্রয়কেন্দ্রটিতে জাহাজ ও বড় বড় নৌকার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে এখানে স্থবির অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপরও গত বছর পর্যন্ত ক্রয়কেন্দ্রটি টিকে ছিল। ২০১৯ সালে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি পাটকল এখানে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে পাট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিজেএমসি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের ক্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এবার বেসরকারি কোনো পাটকলের ক্রয়কেন্দ্র এখানে নেই। ফলে এবার পাটের ভরা মৌসুমে সুনসান নীরব হয়ে আছে ক্রয়কেন্দ্রটি। দিনের বেলায়ও এখানে যেন ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবছর বেড়ায় ৩ হাজার ৪৮০ হেক্টর ও সাঁথিয়ায় ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গতবার বেড়ায় ২ হাজার ৫৩০ হেক্টর ও সাঁথিয়ায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। গতবারের চেয়ে এবার পাটের দাম বেশি পেয়েছে কৃষক। তবে আগামী বছর পাটের আবাদ আরও বেশি হবে বলে জানা গেছে।

গত দুই তিন দিন বেড়া- সাঁথিয়ার ও কাশিনাথপুর পাটের বাজারে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হতে দেখা গেছে। এই দামে পাট বিক্রি করে হাটে যাওয়া-আসার পরিবহন খরচ মিলিয়ে চাষিদের উৎপাদন খরচসহ মোটামুটি লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা।

সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, পাটপট্টির অর্ধশতাধিক গুদামসহ দোকানগুলো তালা দেওয়া অবস্থায় পড়ে আছে। বেশির ভাগ পাটের গুদামই এখন ফাঁকা পড়ে আছে। আবার কিছু গুদাম অন্য পন্যের গুদাম হিসাবে ভাড়া দিচ্ছেন। কিছু গুদামের সামনে গুদাম বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড লাগানোও দেখা গেছে। এ ছাড়াও রয়েছে পাট ব্যবসায়ীদের নিজস্ব আরও অনেক পাটের গুদাম।

শ্রমিক ইদ্দিস আলী বলেন, ‘আমরা এই পাটপট্টিতে অনেক শ্রমিকরাই ১৫-২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছি। তাঁরা পাটের কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ জানেন না। অথচ হঠাৎ কইরাই এসব শ্রমিক বেকার হয়া গেল। আমরা এখন কি কাজ করে খাব।’

এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বেড়া পাট ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন শতাধিক পাট ব্যবসায়ী। এমনিতেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের আয়ের পথ। এর ওপর বিজেএমসির একাধিক পাটকলের কাছে ব্যবসায়ীদের পাওনা রয়েছে মোটা অংকের টাকা। শুধু বেড়ার ব্যবসায়ীরাই বিজেএমসির কাছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাবেন। বিজেএমসি এই টাকা শোধ না করেই পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বেড়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেএমসির কাছে আমার ১৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে গত ২ বছর বিজেএমসির আমিন জুট মিলসে পাট দিয়েছিলাম। এই টাকা কবে পাব বা আদৌ পাব কি না, তা জানি না। এর মধ্যে আবার পাওনাদারেরা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন আমি কী করব তা ভেবেই পাচ্ছি না। আমি ছাড়াও আমার মত আরও অনেকের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিজেএমসির কাছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close