এম কবির, টাঙ্গাইল

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

ভূঞাপুরে যমুনার ভাঙনে সহস্রাধিক বাড়ি বিলীন

যমুনার ভাঙনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে যমুনার পূর্ব পাড়ের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া অংশে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমিসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

এছাড়া হুমকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী চিতুলিয়া পাড়া গ্রাম, নদী রক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহারের উঁচু সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা। গত এক সপ্তাহে চিতুলিয়াপাড়া এলাকার প্রায় দেড়শ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। গত কয়েক বছরের ভাঙনে যমুনা পূর্ব পাড়ের খানুরবাড়ি, বেপারি পাড়া, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়া পাড়া এলাকার হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি ও ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতরে জীবনযাপন করছে ভাঙন কবলিত এসব মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী চিতুলিয়া পাড়া অংশে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা। নিজেদের চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। বুকফাঁটা আর্তনাদ নিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে পরিবারের লোকজনরা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ভাঙন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এই অসহায়ত্ব দেখার যেন কেউ নেই। এরমধ্যে অনেকে আবার ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারো কারো আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে।

এদিকে এবার বন্যার প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সে সময় নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের বস্তা ফেলেছিলেন স্থানীয়রা। পানি কমে গেলে নদী ভাঙন কিছুটা কমে আসে। সে সময় তারা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভূঞাপুরের চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ রাজ্জাক মিয়া বলেন, এর আগেও কোনাবাড়ি চরে আমার বাড়ি আছিল, তহন হেইডা ভাইঙ্গা গেলে এইখানে বাড়ি করি। নদী আমার ব্যাবাক কিছু শ্যাষ কইরা দিছে। এই বাড়িডাও শ্যাষম্যাষ ঠেকাইতে পারবো না। হারা রাইত পার দিয়া ঘুরছি আর কান্দিছি। এহনো কান্দিতাছি। কি করমু বাহে, যামু কনে? এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের নুর হুসাইন বলেন, যমুনার ভাঙনে আমাদের ২০ শতাংশ জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে। গত বছরে ২০০ মতো ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও ১ থেকে দেড়শ বাড়ি নদীতে চলে গেছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই।

চিতুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৫৫) বলেন, আমাদের যা সয়সম্বল ছিল তা নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন যেটুকু আছে তাও মনে হয় চলে যাবে। সরকার থেকে যদি বাঁধ করে দেয় তাহলে আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।

ভূঞাপুর ইউএনও মোছা. ইসরাত জাহান জানান যমুনার পূর্বপাড়ে ভাঙনের বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান ভাঙন রোধে উপজেলার বিভিন্ন অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ খুব দ্রুত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভূঞাপুরের যমুনার পূর্ব পাড়ে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close