নান্দাইল (ময়মনসিংহ) ও চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ০৯ আগস্ট, ২০২২

সার-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকের হিমশিম

ডিজেল ও ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ফসল উৎপাদনে। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাক্টর দিয়ে কৃষকের জমি চাষে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় সার কেনার ঘর খরচ বেড়েছ কৃষকের। এ অবস্থায় কৃষক জমি চাষ করে ফসল উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছেন। কৃষি অফিসও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকেরা ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করছে।

জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলায় আগে ১০ শতাংশ (এক কাঠা) জমি তিন চাষে ২৫০ টাকা নেওয়া হতো। যেখানে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন গুণতে হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।

কৃষিমন্ত্রী বলেছেন কৃষকেরা নাকি সার অবচয় করে। সে জন্য সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মঞ্জুরুল হক নামের একজন কৃষক বলেন, ‘জমিতে যতটুকু সার প্রয়োজন সেটাই দেওয়া হয়। জমিতে বেশি সার দেওয়া হলে জমিতে ফসল হবে না। বর্তমানে দেশে যে অবস্থা কৃষকদের বাঁচতে দেবে না। কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ধানের দাম তো বাড়ানো হয়নি। এভাবে সব জিনিসের দাম বাড়তে তো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জমি চাষে এখন বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।’

মজিবুর রহমান নামের একজন ট্রাক্টরচালক বলেন, ‘তেলের দাম বাড়াইছে; এখন তো আমাদের কোনো কিছু করার নেই। এহন বেশি দামে তেল কিনি হালচাষে বেশি টাকা নিচ্ছি।’

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, ট্রাক্টর মালিকেরা সে অনুপাতে সহনীয় পর্যায়ে দাম নিতে হবে। যাতে কৃষক বেঁচে থাকতে পারে।’

এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী প্রতিনিধি জানান, চিলমারীতে আমনের ভরা মৌসুমে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় কৃষক। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আগেই ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ৬ টাকা বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এসবের দাম না কমলে চাষবাদ করতে হিমশিম খেতে হবে বলে অভিযোগ করেছে কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চরাঞ্চলসহ এ উপজেলায় প্রায় ২০ ভাগ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। তবে ডিজেলসহ সারের দাম বাড়ায় উৎপাদন ও পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। সম্প্রতি সময়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ডিএপি সার, এমওপি সার ১০ কেজি ও ৫ কেজি করে ধান বীজ বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

থানাহাট ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এক একর জমিতে এবার আমন আবাদ করেছেন। এরআগে তার এক একরে জমি চাষ ও সেচে খরচ পড়তো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকার মতো। জ্বালানি ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার খরচ বাড়বে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

চিলমারী ইউনিয়নের কৃষক সুমার আলী বলেন, সার ও তেলের দাম বাড়ায় এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিতে হবে। কারণ ফলন উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। কৃষক যদি ধান চাষ না করে, তাহলে দেশের অবস্থা তো অনেক খারাপ হয়ে যাবে।

একই ইউনিয়নের ডেমনারপাড় এলাকার কৃষক জব্বার আলী বলে, হঠাৎ এই দাম বাড়ার ফলে এখন জমি আবাদ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার যদি দাম কমায় তাহলে হয়তো স্বাভাবিকভাবে চাষাবাদ করতে পারবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাশ জানান, দাম বৃদ্ধিতে কৃষকদের ওপর প্রভাব পড়তে পাড়ে। সরকারিভাবে কৃষকদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে আশা করছেন বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close