দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

পাটের ভালো ফলন হলেও পচানো নিয়ে চিন্তায় চাষি

পাটের ভালো ফলন হলেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না গোপালগঞ্জের চাষিরা। জাগের উপযুক্ত পরিবেশ না হলে ভালো পাটের আঁশ মেলে না। আঁশ সুন্দর না হলে পাটের ভালো দামও পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে পাট নিয়ে শংকায় চাষিরা। যতটুকু পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তার আঁশ বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জানা গেছে, এ মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের বেশি ফলন পায় চাষি। জমি থেকে পাট কেটে বাড়ির উঠান, সড়কের দুই পাশে স্তূপ করে রেখেছে তারা। কিন্তু পাট কাটার এ সময়ে ভরা বর্ষা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি না থাকায় খাল-বিল আর ডোবা-নালায় দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। ফলে চাষিরা পাট পচাতে পারছেন না। এক পুকুরে অধিক পাট পচানোর ফলে আঁশের রং নষ্ট হয়ে কালো হয়ে গেছে। ফলে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে জানা গেছে, এ বছর বাজারে পাট মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায়। কিন্তু পাটের রং কালো হয়ে গুণগত মান নষ্ট হলে দাম কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন পাট ব্যবসায়ীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তোষা পাট ২৫ হাজার ৪১৯ হেক্টর, মেস্তা পাট ৫৮৬ হেক্টর ও দেশি পাট ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ২.৪ টন পাট উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৬৬৪ টন। এরই মধ্যে ৪০ ভাগ পাট কাটা হয়েছে। বাজারে পাটের দাম ভালো রয়েছে। তাই এ পাট প্রায় ৪০০ কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক সুরেশ মালাকার বলেন, পাটের ভালো দাম পাচ্ছি। তবে পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে। এক হেক্টর জমিতে পাট চাষে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের রবিউল শেখ বলেন, খালে পানি নেই। তাই পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এরই মধ্যে পানি পচে গেছে। পচা পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং ভালো হচ্ছে না।

মুকসুদপুর উপজেলা সদরের পাট ব্যবসায়ী মো. আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছিল। ঈদের পর পাটকলগুলো পাট কিনতে শুরু করলে দাম বাড়তে থাকে। জুটমিলগুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে পাটের বাজার আরো বাড়তে পারে।

মুকসুদপুর উপজেলা সদরের আরেক পাট ব্যবসায়ী শ্যামল কুন্ডু বলেন, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। তারা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে নামায় পাটের দাম বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর পাট চাষের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তাই এই জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে চাষিদের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় সব সøুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close