আব্দুর রহমান রাসেল, রংপুর ব্যুরো

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

নদী ভাঙনের কবলে মসজিদ ও কবরস্থান

* নদীগর্ভে ১০০ একর ফসলি জমি ও বসতভিটা * এমপির ডিও লেটারেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড * স্থায়ীভাবে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের দাবি

ঘাঘট নদীর ডানতীরে রংপুরের মিঠাপুকুরের সীমান্তবর্তী খোর্দ্দ কোমরপুর ও বুজরুক কোমরপুর পাশাপাশি গ্রাম। এই গ্রাম দু’টি নিয়ে ঘাঘট পাড়া গ্রাম। প্রায় হাজার দুয়ের মানুষের বসবাস। ঘাঘট নদীর ভাঙ্গন একমাত্র দুঃখ এই গ্রামের মানুষদের। গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে শতাধিক একর ফসলি জমি এবং পাকাণ্ডআধাপাকা ঘরবাড়ী ও বসত ভিটা। এছাড়াও, ৫০০ বছরের পুরোনো কবরস্থানের প্রায় অর্ধেকটা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গণের আশঙ্কায় রয়েছে দেড়শত বছরের একটি সমজিদ।

অপরদিকে, নদীর বামতীরে পীরগাছা উপজেলার কৌকুড়ি ইউনিয়নের মোংলাকুঠি গ্রাম। হাজার দেড়ের মানুষের বসবাস। সেখানে নদীর ভাটির দিকে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙ্গণের আশঙ্কামুক্ত গ্রামটি। অতীতে ঘাঘট নদীর ডান ও বামতীরের মানুষগুলো দুঃখ-কষ্ট ছিল একই ধরনের। বর্তমানে বেশ ভাল আছেন বামতীরের মোংলাকুঠি গ্রামের মানুষগুলো। আর তীব্র অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন ডানতীরের ঘাঘট পাড়া গ্রামে বসবাসকারীরা।

কষ্টে জীবনযাপন করছেন ঘাঘট পাড়ার মানুষগুলো। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভাঙ্গণ মোকাবেলায় সংগ্রাম করেও কোন সুরাহা পাননি গ্রামবাসী। ফলে তারা গঠন করেছেন নদীর ডানতীর রক্ষা কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান এমপি ভাঙ্গন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ডিও লেটার প্রদান করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে চলতি মৌসুমে ফের ভাঙণের আশঙ্কায় রয়েছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের খোর্দ্দ কোমরপুর ও বুজরুক কোমরপুর ঘাঘটপাড় গ্রামের মানুষগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাঘট নদী উত্তর হতে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে পূর্বেদিকে বাঁক নিয়েছে। এই বাঁকের মধ্যে পড়েছে ঘাঘটপাড় গ্রাম। একটা সময় গ্রামটি ছিল জনমানবপূর্ণ। এখন গ্রামটিতে খুব বেশি মানুষ বসবাস করে না। অনেকে গ্রামের উত্তরপাশে আবাদি জমিতে বসতবাড়ি স্থাপন করেছেন। সেখানেই থাকেন তারা। বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায়। অনেকে একাধিকবার বাড়ি স্থানন্তর করেও রক্ষা পায়নি ভাঙ্গণের কবল থেকে। তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে ৫০০ বছরের কবরস্থান ও একটি মসজিদ। ইতোমধ্যে কবরস্থানটির অনেকাংশ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

খোর্দ্দ কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, খোর্দ্দ কোমরপুর ও বুজরুক কোমরপুর গ্রাম মিলে ঘাঘটপাড়া। এই গ্রামের পূর্বপুরুষদের কবর রয়েছে। প্রায় পাঁচশ বছর আগেরকার এই কবরস্থান ও একটি মসজিদ। কয়েক বছরের নদী ভাঙণের ফলে কবরস্থানের প্রায় অর্ধেকটা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। দু’এক বছরের মধ্যে পুরোটা বিলিন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি আমরা। তিনি আরও বলেন, রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু তাহেরের বাড়িটি কয়েকবার নদীতে ভেঙ্গে গেছে। ঘরবাড়ী হারিয়ে তিনি পাগল প্রায়। দ্রুত ভাঙন রোধে করার দাবি করেন তিনি।

ভাঙ্গনের শিকার আবদুল বাতেন বলেন, আমার বাড়ি এ পর্যন্ত ৫-৬ বার নদীতে ভেঙে গেছে। আবারও আশঙ্কায় রয়েছি নদী ভাঙ্গনের। এখানে স্থায়ীভাবে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে গোটা গ্রামটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল হক ভূঞা বলেন, একটি আবেদন পেয়েছি। ওই স্থানটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close