বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

  ০৪ জুলাই, ২০২২

সরকারি ফলবাগান দখলে চলছে প্রতিযোগিতা

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর এলাকার সরকারি একটি ফলবাগান দখলের মহোৎসব চলছে। এতে ওই বাগানের আম ও লিচু গাছ হুমকির মুখে পড়া ছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে জমি দখল করে তৈরি হচ্ছে দোকান আর বাড়ি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার সুবাদ সরকারের ছেলে মকবুল হোসেন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে লিজ নেন ওই বাগানটি।

গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা ফলবাগান ইজারা ও ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে তাকে ওই বাগান লিজ দিতে মনোনীত করা হয়। জেলা ফলবাগান ইজারা ও ব্যাবস্থাপনা কমিটির রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও সদস্য সচীব শওকত মেহেদী সেতুর চিঠি পাওয়ার পর তিনি ৫ এপ্রিল ওই সংক্রান্ত সর্বমোট ৮৯ হাজার ৪১৩ টাকা পরিশোধ করেন যার মেয়াদ শেষ হবে ৩ বছর পর।

সরেজমিনে জানা যায়, ১৮৫১ ও ১৮৫২ দাগে মোট ৮৫ শতক ওই জমিটি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। জমিটিতে রয়েছে ৭টি ফজলী আম গাছ ছাড়াও ৫টি লিচু গাছ। দেখা যায়, ওই জমি সংলগ্ন রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে ১৬টি দোকান। ফল বাগানের ভেতর করা হয়েছে ২টি বাড়ি। বাড়ির পাশে বাগানের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ছাপ স্পষ্ট।

এছাড়া বাগানের ভেতরে গড়ে ওঠা বাড়ির মাঝে বড় আকারের আমগাছের গোড়া পর্যন্ত দখল করে রাখা হয়েছে পারিবারিক বিভিন্ন ব্যাবহার্য সামগ্রী দিয়ে। পাশেই নজরে পড়লো গরু, ছাগল, মুরগির বিচরণ। পাশেই করা হয়েছে গবাদী পশুর জন্য খড়ের পালা। লাগানো হয়েছে কলাগাছ। পাশেই দেখা মিলল শ্যালো মেশিনসহ বিভিন্ন পার্টস আর গাড়ি মেরামতের দোকান। রয়েছে অন্যান্য দোকানও। যেন সরকারী ওই বাগান দখলে নিতে চলছে প্রতিযোগীতা। এমন অবস্থায় স্পষ্ট হুমকির মুখে রয়েছে সরকারী সম্পদ ওই আম আর লিচু গাছ। শঙ্কা তৈরি হয়েছে সরকারী ওই জায়গার সীমানা ঠিক রয়েছে কি-না তা নিয়ে।

স্থানীয়রা জানালেন, যার যেভাবে খুশি বাগান দখল করছে, কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি। আবার অনেকে জমি দখল করে নির্মাণ করছে ইটের ব্যাবসা, প্রতিষ্ঠান। এ যেন সরকারী জমি আর সম্পদ দখলের মহোৎসব।

বাগানের ভেতরের বসবাসকারী রাজিয়া জানান, উপজেলা থেকে তারা ওইখানে বসবাসের অনুমতি নিয়েছেন। তবে কে অনুমতি দিয়েছে বা কিভাবে অনুমতি পেয়েছে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

পার্টস বিক্রেতা মনিরুল ওয়ার্কসপে দায়িত্বরতরা জানান, দোকানের মালিক টিএনওকে বছরে ২০০-২৫০ টাকা করে ওই দোকানের ভাড়া দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লীজ গ্রহিতা মকবুল জানান, স্থানীয় ওই দখলদারদের অত্যাচারে ইতোমধ্যেই বড় আকৃতির একটি আমগাছ মারা গেছে। অন্য গাছগুলোও হুমকির মুখে। তাদের অত্যাচারের কারণে পাহাড়া দিয়েও তিনি রক্ষা করতে পারছেন না ফল। এতে তিন বছরে তাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তিনি এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল দখলদারদের দাবি অস্বীকার করে জানান, ওই বাগানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের এক্ষেত্রে কোন এখতিয়ার নেই আর ভাড়া, নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল ইসলাম জানান, এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close