তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২০ জুন, ২০২২

নৌকা ও চাঁই তৈরির ধুম

বর্ষায় হারানো যৌবন ফিরে পায় বিখ্যাত চলনবিল। আর কিছুদিন পরেই পানিতে থই থই করবে বিলটি, তখন নৌকা ছাড়া চলাচল সম্ভব হবে না। দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত চলনবিলে এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বেড়ে গেছে মাছ শিকারের উপকরণ আর নৌকার চাহিদা। তাই মাছ শিকারের অন্যতম উপকরণ ‘চাঁই’ ও নৌকা তৈরির জন্য সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মৌসুমি কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিল অঞ্চলে ঘরে বসেই চাঁই তৈরি করেন কারিগররা। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবরিষা, চলনালী, শিধুলী, চরকাদহ, উদবারিয়া, পোয়ালশুড়া, সোনাবাজু, বড়াইগ্রাম উপজেলার মাড়িয়া, শ্রীরামপুর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বহু বছর ধরে তারা চাঁই তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

শিধুলী গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর সালমা-করিম দম্পতি জানান, চাঁই তৈরিতে তোল্লা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কাস্তে, আঁশ ছড়ানোর জন্য বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়। প্রথমত, তালের ডাকুর ৭-৮ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ওই ডাকুরগুলো থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। আঁশ ও বাঁশের খিল চাঁই বাধার কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলত তোল্লা বাঁশে কাজ করে বেশি সুবিধা। তাই তোল্লা বাঁশও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা চলনবিলে নৌকা ও চাঁই তৈরির ধুম দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধামতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়।

এরই মধ্যে চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, মির্জাপুর, সলঙ্গাসহ ২০-২৫টি হাট সদ্য তৈরি নতুন চাঁইয়ে ভরে উঠেছে। তবে বাঁশের দাম বাড়ায় চাঁইয়ের দামও বেড়েছে বলে জানান পাবনার ভাঙ্গুড়ার চাঁই তৈরির কারিগর মোহন দাস।

এদিকে চলতি বছর বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্বাভাবিক মাপের চাঁই ৩০০-৩৫০ এবং বড় চাঁই প্রকারভেদে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাড়াশের নওগাঁ হাটে আসা নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আবু জাফর।

চলনবিল এলাকার তৈরি চাঁইয়ের চাহিদা আছে দেশের অন্যান্য এলাকায়ও। নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

পাবনার ভাঙ্গুড়া থেকে আসা চাঁই কেনার ব্যাপারী রহমান জানান, চলনবিল অঞ্চলে তৈরি হওয়া চাঁই, খোলসুন, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তিসহ নানা রকমের মাছ শিকারের উপকরণ। আমি তাড়াশের নওগাঁ, চাটমোহরের সাইকোলা, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় ও নয়াবাজার হাট থেকে এগুলো কিনে থাকি।

উপজেলার নওগাঁ গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর জয়নাল বলেন, এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী ছোট, বড় বিভিন্ন আকারের নৌকা বানানো হয়। নৌকাগুলো আকারভেদে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিস্ত্রিরিপাড়ার নব কুমার সূত্রধর বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই নৌকা তৈরির কাজে জড়িত। আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন শিমুল, আম, কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে। যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, চলনবিল এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকারের নানা উপকরণ বিক্রি হয়। পাশাপাশি জেলেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জাল বুনানোর কাজে। এ সময় নৌকা আর জাল তাদের উপার্জনের একমাত্র উপকরণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close