নুরুল ইসলাম, পটিয়া (চট্টগ্রাম)

  ২৩ মে, ২০২২

শ্রীমতি খালের মাটি হরিলুট ঝুঁকিতে বসতঘর-কৃষিজমি

চট্টগ্রামের পটিয়ায় শ্রীমতি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি লুট চলছে। বালু মহাল ইজারা নিয়ে স্কেভেটর দিয়ে ২০ ফুট গভীর মাটি কাটা হচ্ছে। এর ফলে উপজেলার হাইদগাঁও, শ্রীমাই ও বাহুলী এলাকায় খালের দৃশ্যপট পর্যন্ত পাল্টে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দেখানো হয় নানা ভয়ভীতি।

গত ৫-৭ বছরে বাহুলী, শ্রীমাই ও হাইদগাঁও মৌজা এলাকায় খালের দুই পাড়ের শত শত একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে অসংখ্য কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে। অথচ কৃষি জমি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পটিয়ায় বালুমহাল ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে প্রতিদিন স্কেভেটর দিয়ে খালের মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। বর্তমানে খালের বাহুলী ও হাইদগাঁও তুলাতুলি পয়েন্টে গভীর করে খালের মাটি কাটা চলছে। দেখে মনে হবে যেন পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে কৃষকের ফসল ছাড়াও দক্ষিণ হাইদগাঁও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রীমতি মন্দির, আশপাশের অসংখ্য বসতি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আসছে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

কৃষক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমতি খাল উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও পাহাড়ের ১০-১২ কিলোমিটার দূরে ইব্রাহিম ফকিরের ঢালা থেকে শুরু হয়েছে। খালটি হাইদগাঁও, শ্রীমাই, বাহুলী, ভাটিখাইন ও ছনহরা হয়ে মুরালী খালের সঙ্গে যুক্ত হয়। চলতি বোরো চাষের জন্য খালের হাইদগাঁও রাজঘাটা ব্রিজের পশ্চিমে একটি বাঁধ সৃষ্টি করা হয়। এরপর থেকে হাইদগাঁও, শ্রীমাই ও বাহুলী এলাকা থেকে প্রভাবশালীরা খালের মাটি কেটে বিক্রী করছে। বালু মহাল ইজারার আইন কেউ মানছে না। কেউ আইন লংঘন করলে তাকে দুই বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।

হাইদগাঁও শ্রীমতি মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহ জানিয়েছেন, শ্রীমতি খালের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতি বছর অষ্টমী ¯œান করতে দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পূর্ণার্থীরা এ তীর্থস্থানে ছুটে যান। বালু মহাল ইজারা নিয়ে খালে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটা চলছে। যার কারণে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে ইতোমধ্যে হতাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে হাইদগাঁও, শ্রীমাই ও বাহুলী এলাকার শত শত একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। প্রভাবশালীদের কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কৃষক ও স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।

দক্ষিণ হাইদগাঁও গ্রামের সমীর চন্দ জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক থেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে শ্রীমাই খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি লুট করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। খাল থেকে গভীর করে মাটি কাটার কারণে ইতোমধ্যে তার ৫০ শতক জমি বিলীন হয়েছে। তিনি নয় এভাবে ইদ্রিস সওদাগর, বাহাদুর চন্দ, অভি চন্দ, জ্ঞান চন্দ, গিরিশ চন্দসহ অসংখ্য মানুষের জমি শ্রীমাই খালে বিলীন। মাটি কাটা বন্ধ করা না গেলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে ভিটে বাড়ি হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়বে।

পটিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সরওয়ার উদ্দিন জানিয়েছেন, খালের ভাঙনে ইতোমধ্যে হাইদগাঁওসহ আশপাশের এলাকার অসংখ্য কৃষকের ফসলি জমি খালে বিলীন হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close