গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০২২

মাঠে মাঠে পাকা ধান

শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

গোপালগঞ্জে ধানের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। যেখানে ধান মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, সেখানে একজন শ্রমিকের মজুরি হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা এখনো তাদের ইরি-বোরো ফসলের পাঁকা ধান ঘরে ওঠাতে পারেননি। স্থানীয় শ্রমিকের সঙ্গে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সৃষ্ট বাতাস ও বৃষ্টিতে বেশ কিছু জমির ধান গাছ পড়ে গিয়েছে। শ্রমিকের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলার ধানচাষিরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমির ধান পেকে গেছে এবং বৃষ্টি ও বাতাসে বেশকিছু জমির ধানগাছ পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে আছে। ধান চাষিরা বলছেন, একটা শেষ হতে না হতেই আবার শোনা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় করিমের পদধ্বনী। ঈদের আগে থেকে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করলেও বেশিরভাগ কৃষকের ধান শ্রমিকের অভাবে মাঠেই পড়ে আছে। তাই কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ধানের মূল্যের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকায় কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও এখন ধান কাটছেন এবং বয়ে বাড়িতে আনছেন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭১৬ হেক্টর, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, মুকসুদপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ২৬৩ হেক্টর, কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর ও কাশিয়ানী উপজেলায় ১২ হাজার ২৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। হাইব্রিড জাতের ধান বিঘাপ্রতি ৫০ মণ ও উফসি জাতের ধান ৩৫ মণ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে। সার, বীজ ও অন্যান্য খরচ দিয়ে বিঘাপ্রতি কৃষকের প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

শ্রমিক সংকটের কারণে বাকি ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। বর্তমান বাজারে ধান মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে চাইলেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক।

গওহরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রকিবুল ইসলাম বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আমি বোরো ধানের চাষ করেছি। ধান লাগানো থেকে কাটা পর্যন্ত শ্রমিক মূল্যসহ ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ৩০ মণ ধান বিক্রি করেছি ২১ হাজার টাকা। কয়েক মাস কষ্ট করে ধান চাষ করে লাভের পরিবর্তে আরো লোকসানে পড়েছি। এভাবে যদি ধানের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকে তাহলে কৃষকরা ধান চাষ থেকে আগ্রহ হারাবে।

সদর উপজেলার কৃষক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলাম। ধানের ফলন ভালো হলেও মূল্য কম। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের মূল্য একমণ ধানের দামের চাইতে অনেক বেশি। এখন কিভাবে ধান কাটব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।

কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড়া গ্রামের জাহিদ মুন্সি বলেন, ৪ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। সব খরচ মিলিয়ে এবার লাভের মুখ তো দেখবই না বরং লোকসানে পড়ব। তবুও ফসল ঘরে উঠানোর আশায় ধান কাটার শ্রমিক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তাই আতঙ্কে দিন পার করছি।

কাশিয়ানী উপজেলার তালতলা গ্রামের তরুন কান্তি বিশ্বাস জানান, একদিকে যেমন ধান কাটার শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে শ্রমিক পাওয়া গেলেও জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বর্তমানে ধান মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। শ্রমিকের দাম মিটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। সরকার যদি ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ না করেন তাহলে কৃষকদের বাঁচতে কষ্ট হবে।

মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও শ্রমিক সংকট রয়েছে। এবার শ্রমিকের মূল্য গতবারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সম্প্রতি বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে কিছু জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে আবার অনেক জমিতে পানি জমেছে। ফলে ধান কাটতে শ্রমিকদের কষ্ট হচ্ছে। চাষিরা অবশ্যই ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close