ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ১৪ মে, ২০২২

এক মণ ধানের চেয়ে শ্রমিকের মজুরি বেশি

ইরি ও বোরো ধানের নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষকের চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক। মাঠ থেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। বাতাসে পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। মাঠভরা সোনালি ধান বলে দিচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নবান্ন এসে পড়েছে। কৃষকের সঙ্গে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজন এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। নতুন ধানের চাল তৈরি করে নানা ধরনের পিঠাণ্ডপুলি খাওয়ার উৎসবের অন্য রকম এক বার্তা যেন বইছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। কারণ এক মণ ধানের দামেও একজন ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যায় না।

ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ইরি ও বোরো ধান চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পোকাণ্ডমাকড়ের বালায় কম থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। অনায়াসে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছে না কৃষক। ফলন ভালো হলেও শ্রমিকের দামে চড়া হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় মোট ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর।

ধমারাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার আমতা, কুশুরা, গাংগুটিয়া, সূতিপাড়া, ভাড়ারিয়া, বালিয়া, ধামরাই সদর, নান্নার, কুল্লা, যাদবপুর, সূয়াাপুর, সানোড়া, চৌহাট, বাইশাকান্দা, সোমভাগ এবং রোয়াইল ইউনিয়নের মাঠে ইরি ও বোরো ধান চাষ হয়েছে। এখন এসব মাঠের পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। তবে শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

গাংগুটিয়া ইউনিয়নে ধান কাটতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিক মফিজুল জানান, এবার কালবৈশাখী ঝড়ে বেশির ভাগ জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। এর জন্য পরিশ্রম বেশি তাই প্রতিদিন হিসেবে ১ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সুঙ্গুরচর গ্রামের বর্গাচাষি জুলফিকার আলী বলেন, চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে রাসায়নিক সার ও সেচ মিলে খরচ পড়েছে ৭ হাজার টাকা। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে খরচ ৭ হাজার টাকা। জমির মালিককে দিতে হবে পাঁচ মণ ধান।সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ। অথচ বিঘায় উৎপাদন হবে ২০-২৪ মণ। এতে বর্গাচাষিদের তেমন কিছুই থাকবে না।তবে থাকতো যদি ধানকাটা শ্রমিকের দাম কম হত।

কৃষক আমছের আলী বলেন, এই বছর আমি চার বিগা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আঘাতের কারণে বৈরি আবহাওয়া আমরা দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে চাইলেও শ্রমিক সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না। আবার সুযোগ বুঝে শ্রমিকরা পারিশ্রমিক বেশি চাচ্ছেন বলে জানান এই কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, চলতি বছরে উপজেলায় মোট ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। এসব মাঠের পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আঘাতে

বৃষ্টির কারণে কিছু নিচু জমিতে পানি জমেছে। ওই জমির ধান কাটতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া ভাল হলে হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা ও মারায় করলে অল্প মুল্যে ধান কাটতে পারবে। তখন আর শ্রমিকের এত দাম থাকবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close