ভোলা প্রতিনিধি

  ১১ মে, ২০২২

দুই দিনের বৃষ্টিতে ডুবছে ফসল

ধারদেনা কইরা লগ্নি জমিতে ধান চাষ করছি। আল্লাহদিলে ধানের ফলন ভালো হইছে। এহন ধান কাইটা ঘরে তোলনের পালা হইছে কিন্তু এই দুইদিনের বৃষ্টিতে সব ধান খেতেই নষ্ট হইয়া যাইতেছে। এহন পথে বওন ছাড়া উপায় নাই। আমি এই দেনার টাকা কেমনে দিমু? নিজের একটা টাকা ক্যাশ নাই। সারের টাকা বাকি, পানির টাকা বাকি, জমির টাকা বাকি। আল্লাহর দিকে চাওন ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। এভাবেই অশ্রু চোখে কথা গুলো বলছিলেন ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন তুলাতুলী গ্রামের কৃষক নূরউদ্দিন মেহের।

কথা হয় একই গ্রমের কৃষক মো. মঞ্জুর সাথে তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি ৩ কানি জমিতে সোয়াবিন, ১ কানি জমিতে বোর ধান চাষ করেছি। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টির কারনে ফসল ঘরে তুলতে পারি নাই। সকল ফসল মাঠে এই বৃষ্টির পানিতে পচতেছে। এই ৩ কানি জমির সোয়াবিন ও ১ কানি জমির বোরধান চাষ করতে আমার প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হইছে। এই ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারলে এই ফসল সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এই বৃষ্টিতে আমার লাভ তো দূরের কথা চালান উঠাতেই দূষক হয়ে যাবে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মিয়া জাহানপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহিন বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ৪০ শতাংশ জমিতে চিনা বাদাম, মরিচ ও মুগডাল করছি। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এখন চিন্তায় পড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে শুনেছি। ফসলের মাঠে বাদাম, মুগডাল, মরিচ রয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনির টানা বৃষ্টিতে জেলায় বরো ধান, মুগ ডাল, চিনা বাদাম, মরিচ ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা সদর চরফ্যাশন, তজুমউদ্দিন উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় কৃষি জমির ফসল মাটির সঙ্গে ?নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত বিঘা জমি জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টির কারনে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বরো ধান, মুগ ডাল, চিনা বাদাম, মরিচ ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। এ ক্ষতির কারণে কৃষকের শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি নির্ণয়ের কাজ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আরও জানিয়েছে, ভোলা জেলায় এবছর ৬৬ হাজার ৬৫৩ হেক্টর জমিতে বোর ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৩২৮ হেক্টর ধান কর্তন করা হয়েছে। এখন ধান কাটা বাকি রয়েছে ৪৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। মুগ ডাল আবাদ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। কাটা হয়েছে ৫০%। চিনা বাদাম আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। যা এখনও সম্পূর্ণ মাঠে রয়েছে। আর মরিচ আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে যার মধ্যে অর্ধেক ফসল কাটা হয়েছে, বাকি ফসল এখনও মাঠে রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেন উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, চলতি রবি শস্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে অনুকূল আবহাওয়া বজায় ছিলো। তবে সাম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে জেলায় কৃষি ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের আমরা সর্বক্ষন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

এদিকে ভোলা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্নিঝড় আশনি প্রভাবে গত সোমবারের মধ্যে রাত থেকে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাস হয়েছে কোথায় কোথায় তা আবার ভারী বর্ষনে রুপ নিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close