পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি

  ১০ মে, ২০২২

পীরগাছার প্রতিবন্ধী রুজিনা

শতাধিক নারীর ভাগ্য বদলিয়ে নিজেই এখন চাকরিপ্রত্যাশী

পীরগাছার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসহায় ও দরিদ্র মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী রুজিনা আক্তার। তার পরামর্শ ও মেধায় শতাধিক নারীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও অর্থের অভাবে রুজিনার ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। প্রতিবন্ধীতা জয় করে সরকারি চাকরির আশায় এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রুজিনা আক্তার।

পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নে দিলালপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে রুজিনা আক্তার। মান্নানের ৫ সন্তানের মধ্যে এক ছেলে, ৪ মেয়ের মধ্যে রুজিনা ৪র্থ সন্তান। জন্মের পর রুজিনার শৈশব ছিল অন্য শিশুদের মতোই। মাত্র ৪ বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান রুজিনা। তাকে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের চিকিৎসা করেও কোন কাজ হয়নি। ঠিক মতো হাটতে পারেন না রুজিনা। এক পা খুড়িয়ে হাটেন। কিন্তু দমে যাননি। মা-বাবার আদরের সন্তান রুজিনা যখন স্কুলে ভর্তি হন তখন অন্য চোখে দেখতো সহপাঠীরা। খেলতে গেলেও তাকে ডাকতো না সহপাঠীরা। বিষন্ন মন ক্লাসে মনোযোগী করে তোলে রুজিনাকে। এরপর প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে প্রতিবন্ধী রুজিনা এখন বিএ (অনার্স-মাষ্টার্স) পাশ। চাকরি খুঁজছেন। বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও মিলছে না তার চাকরি।

২০১৪ সালে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় কর্তৃক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বিশেষ অবদান রাখায় ‘জয়িতা’ হিসাবে মনোনীত হন রুজিনা আক্তার। পরে অনেক আশা-নিরাশার মাঝে সামান্য বেতনে যোগ দেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। কর্ম হিসেবে গ্রামে গ্রামে অসহায় আর দারিদ্র মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন রুজিনা।

সম্প্রতি রুজিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তখন রুজিনা বলেন, প্রতিবন্ধীতা কোনো অভিশাপ নয়। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের মন পরিবর্তন করাই প্রথম কাজ। আমি আমার জীবনে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি এবং সেগুলি অতিক্রম করেছি। এখন আমার একটা সরকারি চাকরি খুবই প্রয়োজন। অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি। কিন্তু হচ্ছে না। আমি চাই সমাজে ভালো কিছু করতে।

স্থানীয় কৈকুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম মিয়া বলেন, যে দেশে প্রতিবন্ধীরা সমাজে অবহেলিত, সে দেশে রুজিনার মত মেয়েরা গ্রামের আলোকিত মুখ। তাদের পাশে দাঁড়ালে তারা একদিন সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারতো। তাই রুজিনার একটি ভালো চাকরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. সেলোয়ারা বেগম বলেন, সমাজে রুজিনাদের অবদান অপরিসীম। তারা প্রতিবন্ধী হয়েও যে কাজ করছে, সুস্থ্য-স্বাভাবিক মানুষও তা করেনা। রুজিনাকে জয়িতা মনোনীত করেছি। তবে তার একটা সরকারি চাকরি হলে ভালো হতো।

রুজিনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, একজন মেয়ে প্রতিবন্ধী হয়েও যখন অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে, তখন বুঝতে হবে তার মেধা আছে। যখন সে গ্রামের মহিলাদের নিয়ে কাজ করে, তখন তার কাজের মূল্যায়ন দেওয়া দরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close