খালেকুজ্জামান পান্নু, পাবনা

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২২

কাজিরহাট-আরিচা নৌরুট

ফেরিঘাটে ছয় দিন

ফেরি সংকটের কারণে প্রায় দুই মাস ধরে কাজিরহাট-অরিচা রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল চরম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এ নৌরুটে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। প্রতিদিনি তিন শতাধিক যানবাহন পারের অপেক্ষায় ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে টার্মিনালে চালক ও যাত্রীদের জন্য টয়লেট সুবিধা না থাকায় চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন ঘাটে অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিকরা। নদী পার হতে ট্রাক চালকদের ফেরিঘাটে পাঁচ থেকে ছয় দিন অপেক্ষা করতে হয়।

প্রচণ্ড শীতে তারা রাস্তার ওপর রাত যাপন করছেন। টার্মিনাল এলাকায় নেই পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার। আবাসিক হোটেল ও স্বাস্থ্যসম্মত রেস্টুরেন্টেরও ব্যবস্থা নেই। ভাসমান কয়েকটি ছোট রেস্টুরেন্ট থাকলেও নিম্নমানের খাবার আর অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভাসমান এসব রেস্টুরেন্ট থেকে অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ঘাটে আটকে পড়া ট্রাক চালকরা চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছর কাজিরহাট-আরিচা নৌপথ চালু হয়। ফলে পাবনা, নাটোর, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার পণ্যবাহী পরিবহন এ নৌপথ ব্যবহার করে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির সমন্বয়হীনতার কারণে নৌপথটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে মত যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের।

কাজিরহাট ফেরি ঘাটের টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট আবুল কাইয়ম বলেন, ‘এ রুটের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের একটাই পথ, সেটি হলো আরো ফেরি ও পল্টুন যোগ করার বিকল্প নেই।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পরিবহন করপোরেশনের কাজিরহাট অফিসের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, পাঁচটির মধ্যে তিনটি ফেরি চলাচলের বাইরে রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে মেরামতের জন্য ফেরি কপোতি আরিচা ঘাটে নোঙর করা রয়েছে। এখন ক্যামিলী ও কদম নামে দুটি ফেরি চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে একটি ফেরি অকেজো হয়ে পড়লে তখন সমস্যা আরো প্রকট হয়।

তিনি আরো জানান, কয়েক মাস ধরে ঘাট অচলাবস্থায় থাকলেও পল্টুন স্বল্পতার কারণে ফেরি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফেরিঘাটে ঘাট-পল্টুন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছি, পল্টুন ও ঘাট না বাড়ালে ফেরিঘাটের অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূরীকরণে ডেপুটেড ফেরিগুলো সার্ভিসে যোগ দিলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।

বিআইডব্লিউটিএর জনৈক কর্মকর্তা জানান, প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। আরো দুই থেকে তিনটি ফেরি পারাপারে যুক্ত না করা পর্যন্ত সমস্যা থেকেই যাবে। নদীপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ২৮ ডিসেম্বর রো-রো ফেরি শাহ মখদুমকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিসে পাঠানো হয় এবং ২৪ ডিসেম্বর কে-টাইপ ফেরি ফরিদপুরীকে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে পাঠানো হয়েছে।

ট্রাক চালক মোমিনুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য যশোর থেকে ঘাটে তিন দিন অবস্থান করছেন। গতানুগতিক একই সমস্যা অর্থাৎ টয়লেট, গোসল-খাওয়া-থাকার সমস্যায় পড়েছেন। আজগর আলী নামে আরেক এক ট্রাক চালক জানান, গত বুধবার রাতে তিনি কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছান। এখন পর্যন্ত ফেরির টিকিট কাটতে পারেননি তিনি। হাসেম ও আবদুল মিয়াসহ আরো অনেক ট্রাক চালক জানান, নদী পার হতে তাদের ফেরি ঘাটে পাঁচ থেকে ছয় দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

ওসি রওশন আলম বলেন, রাস্তায় অবস্থান করা পণ্য পরিবহনগুলোর নিরাপত্তার জন্য একটি টহল দল দিনরাত অবস্থান করছে। তারা সব সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ট্রাক চালকরা কোনো প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় নেই। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close