সিরাজগঞ্জ ও সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর এবং সিংড়ায় ৩৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা

শস্যভা-ারখ্যাত চলনবিল অঞ্চল এখন বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম। কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে শাকসবজি, সরিষা ও ভুট্রার চাষ হলেও অর্থকরী ফসল হিসেবে বোরো ধানই একমাত্র ভরসা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই বোরো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে রেখেছিলেন কৃষক। এখন শুরু করেছেন চারা রোপণ। বীজতলা থেকে চারা তোলা, হাল চাষ, মই টানা, সার প্রয়োগ, পানি সেচ, শ্রমিকদের কাজের জোগান দেওয়াসহ কৃষকদের ব্যস্ততার শেষ নেই।

চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া, ইটালী ও চৌগ্রামের কয়েকটি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকের এই ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায়। এসব মাঠে স্থানীয় ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা দলবেঁধে কাজ করছেন। কর্ম ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা মাঠেই খাচ্ছেন দুপরের খাবার।

কৃষকরা বলছেন, জ্বলানি তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবছর তাদের খরচটা গতবারের চেয়ে বেশি হচ্ছে। উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের আয়েশ গ্রামের কৃষক আব্দুল জোব্বার ও মতিন ফকির জানান, তেল ও সারের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরীও বেড়েছে। কৃষিবান্ধব এই সরকারের কাছে ধানের ন্যায্য দাবি করেন তারা। একই গ্রামের বর্গাচাষী আব্দুল খালেক জানান, জমি লিজ নিয়ে বোরো চাষ করি। প্রতি বিঘা জমি লিজ বাবদ ৮ হাজার টাকাসহ মোট খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে ধান পাই ২৫ মণ থেকে ২৬ মণ।

ইটালী ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক রইচ উদ্দিন জানান, ৩০ বিঘা জমির মধ্যে ১৮ বিঘা রোপণ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১ সপ্তাহে সব জমির ধান রোপণ শেষ হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মো. সেলিম রেজা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহে বাকি জমির বোরো রোপণ কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।

এদিকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের কৃষকেরা আগাম বোরো (ইরি) ধান আবাদে মাঠে নেমেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার মাঠেই এ ধানের আবাদ করা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ মাঠে কৃষক রোপা আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। অধিকাংশ কৃষকেরাই তাদের আবাদী ফসল রোপা আমন ধান তাদের ঘরে তুলেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা বাদ থাকলেও বোরো ধান লাগানোর প্রত্যাশায় দ্রুত কাটা হচ্ছে।

রায়গঞ্জের দোস্তপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার, ধলযান গ্রামের দলাল মিয়া জানায়, বর্তমান সরকার আমলে সারের অভাব দূর হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে উপজেলার কৃষি অফিস কর্তৃক আমাদের সার্বিক সহায়তা করে আসছে। তাই প্রতিটি ফলনই ভালো হলেও বিগত বন্যায় আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম বর্তমান বোরো ধান চাষে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রামের কৃষক মোনায়েম জানান, এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান নাগাইবার চাইতাছি। এর মধ্যেই ২ বিঘা শেষ করছি। আশা করি বোরো ধানের ফলন এবার ভালো অইবো।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, তাদের কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে এল এল পি পদ্ধতি অর্থাৎ লাইন করে ধান চারা লাগাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে বোরো ধান চারা লাগানো হলে ফসলটির আবাদে কৃষকদের সব দিক থেকেই উপকার মেলে।

জেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র দত্ত জানান, চলতি মৌসুমে কৃষকদের বোরো গাজীপুর থেকে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল হাইব্রীড বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্নবাসনের জন্য সার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক আবু হানিফ জানান, এ জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যেই ৮ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা লাগানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close