কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

হারিয়ে যাচ্ছে ঢলু বাঁশের চুঙ্গাপিঠা

বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারের কথা মানুষ জানে। কিন্তু বাঁশ দিয়ে পিঠা তৈরি করা যায় সিলেটের মানুষ ছাড়া এ খবর কয়জনইবা জানে। মূলত এ পিঠা সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। একসময় এ পিঠা সিলেট ও মৌলভীবাজারের গ্রামীণ জনপদে বেশ জনপ্রিয় ছিল। যাকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় চুঙ্গাপুড়া পিঠা বা চুঙ্গাপিঠা বলে।

চুঙ্গাপিঠা বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্য হলেও একসময় মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় এ পিঠার প্রচলন দেখা যেত বেশি। এ পিঠার অন্যতম উপকরণ হলো পাহাড়ি ঢলু বাঁশ, যা দিয়েই মূলত এ পিঠা তৈরি করা হয়। প্রাচীন ঐতিহ্যের চুঙ্গাপুড়া পিঠা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারা রাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না। একটা সময় ছিল শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময়।

কিন্তু এখন শুধু পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ওই জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মাছের মেলা বসে। মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়, জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে ও কমলগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ঢলু বাঁশ পাওয়া যেত। চুঙ্গাবাড়ীও একসময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢলু বাঁশের জন্য। অনেক আগেই বন ও ভূমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারনে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলু বাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনো ঢলু বাঁশ পাওয়া যায়।

পাহাড়ে বাঁশ নেই বলে বাজারে ওই ঢলু বাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে ওই ঢলু বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারে বিক্রির আশায়। ঢলু বাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না কারণ ঢলু বাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলু বাঁশে অত্যাধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সেদ্ধ হয়।

বাঁশ নিতে আসা আবদুল বাছিত খান বলেন, আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম পরিমাণে বাজারে উঠেছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন কালের পরিবর্তনে হারাতে বসেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক সজিব দেবরায় ও পরিবেশবাদী আহাদ মিয়া জানান, আগে কমবেশি সবার বাড়িতে ঢলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। ওই বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলু বাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধূম লেগেই থাকত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close