সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এক সময় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল গরুর গাড়ি। এই গাড়িকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছিল ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে’ মতো জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গান। এখন সারা দিন চেয়ে থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না। চালক না থাকায়, গাড়িয়াল ভাইয়ের অমৃত কন্ঠের ভাওয়াইয়া গানও শোনা যায় না, সাথে হারিয়ে গেছে কারিগররা।

এ অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল গরুর গাড়ি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে এখন এই যানবহনের দেখা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা আগে গরুর গাড়িতে গোবরসার, লাঙল-জোয়াল, মই নিয়ে মাঠে যেত। বিবাহ অনুষ্ঠান, মেলা এবং ভ্রমণের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। গাড়িতে ছাউনি সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত নববধূরা। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেক সাজানো গাড়ির বহর নিয়ে বরপক্ষ, কনের বাড়িতে যেত। যেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।

উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের রইমুদিনের ছেলে তছলি মামুদের রয়েছে একটি গরুর গাড়ি। তিনি জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই এই যানবহন সংগ্রহে রেখেছেন। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গরুর গাড়ি।

একই ইউনিয়নের দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রবীণ গাড়িয়াল জরিয়াল উদ্দীন (৭০), আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে গরুর গাড়ি ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইটপাথরের মতো মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, হারিয়ে ফেলছে নিজস্ব ঐতিহ্য। এখন গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি, বাস ইত্যাদি। আগে রোজ ঘুম ভাঙতো গরুর গাড়ির মুখ দেখে এখম ঘুম ভাঙে বিকট শব্দের যানবাহনে। এসব বাহনের পোড়া তেল-মবিলের গন্ধে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।

কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মেরিনা জাহান বলেন, বাংলা নববর্ষ এলেই মানুষ নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে মেতে উঠত। এখন বাংলা নববর্ষবরণ শোভাযাত্রায়ও গরুর গাড়ি

দেখা যায় না। এ চিরায়িত ঐতিহ্যগুলোর ঠাঁই হচ্ছে বই ও খবরের পাতায়। বিশেষ দিনে এ ঐতিহ্য তুলে ধরতে সবার উচিত হারানো ঐতিহ্যকে সংরক্ষরণ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।

"