মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

নরসিংদীর মনোহরদীতে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের প্রলোভন দেখিযে দেদার এক্সাভেটর মেশিন দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২৭টি ইটভাটা রয়েছে। যার অনেকটিরই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতে সুবিধা। জমির উপরের অংশ তথা টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বতা ক্ষমতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চালাকচর ইউনিয়নের চেঙ্গাইন গ্রামে রফিকুল ইসলাম, মোকলেছ রহমান, সুমন মিয়া, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্ব ডোমনমারা বড় বিলে দ্বীন ইসলাম দীনু, লাল মিয়া ও নূর হোসেন, মধ্য ডোমনমারা ও বীরগাঁও থেকে আবুল কাসেম, কাউছার মিয়া ও জাকির হোসেন, বড়চাপা ইউনিয়নের বীর মাইজদিয়া এলাকায় রাতের আঁধারে তাজুল ইসলাম মাস্টার এক্সাভেটর মেশিনের মাধ্যমে ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী দিনু ও নূরু বলেন, ইউএনও এবং ভূমি অফিসের অনুমতি নিয়ে আমরা মাটি কাটছি। আমার মতো মনোহরদীর অনেক ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ফরিদ বলেন, যেসব এলাকায় নদীর মাটি আছে সেই এলাকার ইটভাটাগুলোতে এবার ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে না। তবে কোন এলাকায় ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে তা আমার জানা নেই।

কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আকন্দ বলেন, মাটির ব্যবসায়ীদের কারণে রাস্তাগুলো সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি ইউএনও এবং অ্যাসিল্যান্ডকে অবহিত করেছি। তারা আশ্বস্ত করলেও এ পর্যন্ত ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, ‘মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে সময় লাগে। এ ছাড়া মাটির এই অংশে যেকোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সেই জমিতে আর প্রাণ থাকে না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি ওই এলাকায় গিয়েছি। কিন্তু কোন মেশিন বা ট্রাক পাওয়া যায়নি। তবে ফসলী জমির ক্ষতি করে কেউ মাটি কাটালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close