এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

দুই হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ

চাহিদা থাকায় যশোরের কৃষকরা শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরুতে শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়। কিন্তু এ বছর অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। এখন চলছে পুরোদমে আবাদ। চলতি রবি মৌসুমে যশোরের ৮ উপজেলায় প্রায় ২০০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৮৩১ টন।

পেঁয়াজ তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। বেশির ভাগ মানুষের কাছে পেঁয়াজ প্রিয় মসলা। গ্রীষ্ম-শীত উভয় ঋতুতেই পেঁয়াজের চাষ হয়। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়। শীত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষের উপযুক্ত সময়। পেঁয়াজ দুইভাবে চাষ করা হয়। এরমধ্যে একটি পদ্ধতি চারা রোপণ ও অপরটি বীজ থেকে উৎপাদন। যশোর জেলায় বেশি চাষ হয় চারা রোপণের মাধ্যমে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে মণিরামপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর, শার্শায় ২১০ হেক্টর, ঝিকরগাছায় ৫৪০ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ৪৬০ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৭০ হেক্টর ও কেশবপুর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়।

সূত্র আরও জানায়, গত মৌসুমের (২০২০-২০২১) চেয়ে চলতি মৌসুমে (২০২১-২০২২) ২০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১৭০০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিলো ২০ হাজার ৪৪০ টন।

মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করতে আসা একই উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আবুল কাসেম, কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের মিন্টু ও হাসাডাঙ্গা গ্রামের মাহাবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিজের জমিতে চারা উৎপাদনের পর বিক্রি করি। আবার কিনেও বিক্রি করি। আমরা শুধু রাজগঞ্জ বাজারে না, যশোরের বিভিন্ন হাটবাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করি।

রাজগঞ্জের হরিহরনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, এখন শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য খেত প্রস্তত করেছি। রাজগঞ্জ হাটে এসেছি পেঁয়াজের চারা কিনতে। এখান থেকে চারা কিনে খেতে রোপণ করবো। একই ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের আরেক কৃষক নিছার আলী, হানুয়ার-খালিয়া গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, শীতকালীন পেঁয়াজের চারা খেতে রোপণ করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম মারুফুল হক বলেন, আমরা মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকের সার্বিক সহযোগিতাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই মৌসুমে সব ধরণের আবাদ ভালো হবে। এজন্যে কৃষি বিভাগ সর্বক্ষণ কৃষকের পাশে আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ৬০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো। এরমধ্যে প্রণোদনার মাধ্যমে ছিলো ৪০০ হেক্টর জমি। একটা শুভ লক্ষ্মণ ছিলো। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনাবরত বৃষ্টিপাতে অর্ধেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে শীতকালীন পেঁয়াজ ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যদিও দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। এরপরও ১ হাজার ৭৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও কাছাকাছি চলে যাবে। চারা পরবর্র্তীতে কিছু উৎপাদন হয়েছে। বাজারে চাহিদা মোতাবেক প্রচুর চারা আছে। এবার শীত ভালো। কুয়াশার পরিমাণও তুলনামূলক কম। শীতের কারণে যদি পেঁয়াজ উৎপাদন দীর্ঘায়িত হয় পেঁয়াজ ভালো হবে। এছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close