কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৩১ শয্যার জনবলে ৫০-এর কার্যক্রম

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০১৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু ৫০ শয্যার উন্নীত করা হলেও জনবল সংকটে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসা সেবার জন্য যে জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন তাও করা হয়নি। প্রায় তিন বছর ধরে হাসপাতালটি চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে। জনবল সংকটের কারণে ভর্তি ও আউটডোর রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য যেখানে ২২ জন ডাক্তারের প্রয়োজন সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। ৪ জন কনসালটেন্টের জায়গায় রয়েছে শুধু মাত্র ১ জন। ৪ জন ফার্মাসিস্টের মধ্যে একজনও নেই। এছাড়াও সহকারী নার্স ও সিনিয়র নার্স সংকট রয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, একমাত্র এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট থাকলেও জনবলের অভাবে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে ওটির যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে। টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বাক্স বন্দি রয়েছে। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। বিশেষ করে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট পদটি খালি থাকার কারণে সেবাগ্রহীতাদের নিয়মিত বিপাকে পড়তে হয়।

এদিকে স্থানীয়রা জানায়, জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকার ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতী করেছে কিন্তু সেবার মান বৃদ্ধি করেনি। ছোটখাটো পরীক্ষা করানোর জন্য সাধারণ মানুষকে জেলা শহরে যেতে হয়। এছাড়াও করোনা রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনবল সংকটের কারণে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, গাইনি ও সার্জারী কনসালটেন্ট পেলে ওটি চালু করা সম্ভব হত। ওটি চালু করলে সিজার বা ছোট খাটো অপারেশন করা যেত হাসপাতালের মধ্যে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত একজন ডাক্তার বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে রোগীদেরকে সেবা দিতে হচ্ছে। ২২ জন ডাক্তারের জায়গায় আমরা ১১ জন ডাক্তার সেবা দিচ্ছি। হাসপাতালে জনবল বাড়ালে রোগীরা আরও ভালো সেবা পাবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদেরকে সেবা দেই। তাছাড়া অতিরিক্ত সময়েও ডিউটি করতে হয়।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ইমন হোসেন বলেন, চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে বেশির ভাগ রুগীকে তারা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমরা এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা পাই কিন্তু সময়মতো একজন রোগীর সিজার করাতে পারি না। অথচ এই হাসপাতালে সবকিছু আছে নেই শুধু পর্যাপ্ত জনবল।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে নতুন করে ১৫ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের সবাই আন্তরিক থাকায় জনবলের সংকট নিয়েও রুগীদেরকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি জনবল বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, যদি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে এই ৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবা দেওয়া সম্ভব।

সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, দুই এক মাসের মধ্যে টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হবে। কনসালটেন্ট নিয়োগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে জনবল সংকটের বিষয়টি সমাধান হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close