ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

বছরে ৫৬ কোটি টাকার ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি

ধামইরহাট-পত্নীতলায় ৭০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান

নওগাঁর ধামইরহাট এবং পত্নীতলা উপজেলা থেকে প্রতি বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় দুই হাজার ধান মাড়াই মেশিন (পাওয়ার থ্রেসার) সরবরাহ করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষি প্রযুক্তি তৈরিতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মালিকরা।

গত এক যুগ আগে ধামইরহাট উপজেলা সদর ও পত্নীতলা বাজারে ধানমাড়াই মেশিন কারখানা গড়ে উঠেছে। গত ৫-৭ বছরের ব্যবধানে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বেড়ে যাওয়ায় মাড়াই মেশিনের গুরুত্ব বেড়েছে। স্থানীয় ভাষায় মাড়াই মেশিনকে বঙ্গা বলা হয়। এ দুই উপজেলায় কারখানা রয়েছে প্রায় ৮০টি। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় ২০০০ ধান মাড়াই মেশিন তৈরী হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৭০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে।

প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিন তৈরীতে ৫-৬ জন শ্রমিকের ৫-৭দিন সময় লাগে। গত এক বছর আগে প্রতি কেজি শিটের দাম ছিল ৯২-৯৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ১৪৮-১৫০ টাকা কেজি। অ্যাংঙ্গেল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, বর্তমানে ৭৭-৭৮ টাকা কেজি এবং পাতি ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি, বর্তমানে ৬৮ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া শ্যালো মেশিন ৩২ হর্স পাওয়ারের দাম ছিল পূর্বে ৪২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৫৩ হাজার টাকা, ৩৬ হর্স পাওয়ার চাংচাই মডেল ৬২ হাজার টাকা, বর্তমানে ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৬ হর্স পাওয়ার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন শ্যালো মেশিনের দাম পূর্বে ছিল ৮২ হাজার টাকা বর্তমানে ৯৭ হাজার টাকা। করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকে বেড়েছে ধান মাড়াই মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম। প্রতিটি ধান মাড়াই মেশিনের দাম ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২ হাজার মাড়াই মেশিনের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। ধান মাড়াই এ মেশিন দিয়ে একই সঙে মাড়াইয়ের পাশাপাশি পরিস্কার হয়ে যায়। তাই আলাদা করে পরিস্কার করার প্রয়োজন হয়না। বোরো ও আমন মৌসুমে মাড়াই মেশিন বেশি ব্যবহৃত হয়।

এসব মাড়াই মেশিন নোয়াখালি, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কৃষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি সরিষা, তিল, তিশি, গম, ধনিয়া ও কালাই মাড়াই করা সম্ভব হয়ে থাকে।

নজিপুর ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, কারখানায় ১৮ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। মাড়াই মেশিনটি তৈরি করতে কারিগরদের ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি দেওয়া হয়। এর সঙ্গে তিনবেলা খাবার দিতে হয়। শ্যালোমেশিনসহ এ মাড়াই মেশিনটির ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি। এ মেশিনটি বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান মাড়াই মেশিন বিক্রি করেও লাভ থাকছে খুবই কম। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগে যন্ত্রাংশের দাম কম ছিল। সে সময় লাভ মোটামুটি ভাল ছিল।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা যথেষ্ট ভাল ও মানসম্মত থ্রেসার (ধান মাড়াই মেশিন) তৈরী হয়। মাড়াই মেশিন এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসে কারখানাগুলো দেখে গেছেন। আমরা এ শিল্পকে আরো সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close