খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

শিক্ষার্থী ছাড়াই মাদরাসা সুপার!

নামে মহিলা মাদরাসা। কাগজে-কলমে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চললেও বাস্তবে নেই কোনো শিক্ষার্থী। চলতি বছরের এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠানের ১৫ পরীক্ষার্থীর নাম দেখানো হলেও অনুপস্থিত সবাই। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমে দেড় বছর আগেই সত্যতা পেয়েছিল প্রশাসন। ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তবে কাজ হয়নি, নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন মাদরাসার সুপার।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসায় এমন ঘটনা দেখা যায়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই মাদরাসা সুপারের নাম আবদুর রউফ। স্থানীয় পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে ওই পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখানো হয়।

পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রসচিব ইব্রাহিম হোসাইন ও কেরানি আনোয়ার হোসেন জানান, ওই কেন্দ্রের অধীনে পাঁচটি মাদরাসার ১১৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। অনেকেই পরীক্ষা দিলেও বাগাতিপাড়া মহিলা মাদরাসার ১৫ পরীক্ষার্থীর সবাই অনুপস্থিত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাগাতিপাড়া মহিলা মাদরাসা সুপার আবদুর রউফ জানান, ২০০৩ সালে তিনি মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১১ সালে পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছিলেন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ছেলেমেয়ে উভয়ে পড়লেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে শুধু মেয়েশিক্ষার্থী। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ১৩১ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বছর ১৫ জন দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল, কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ায় কেউ পরীক্ষা দেয়নি।

মাদরাসার পাশের অধিবাসী ও গ্রামপ্রধান জামাল জানান, শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী আছে বলে তারা জানেন না। কোনো শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতেও দেখেন না। মাদরাসার সাবেক শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু জানান, তিনি ২০০৫ সাল থেকে ওই মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ২০২০-এর ডিসেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু বলেন, ‘মাদ্রাসা সুপার বিভিন্ন সাবেক শিক্ষার্থীসহ তার মেয়ে ও স্বজনদের নামে উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন- এমন নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে প্রশাসনে জমা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ আলী জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, প্রায় এক থেকে দেড় বছর আগে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়। ওই সময় নিশ্চিত হওয়া যায় ওই প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রতিষ্ঠানটি চলমান রাখতে সুপার নানা কৌশল অবলম্বন করেন। পরে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কাদের নাম দিয়ে মাদরাসা সুপার ১৫ শিক্ষার্থীর ফরম ফিলআপ করেছেন তদন্ত করে দেখা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close