মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

তেলের দামে কৃষিতে খরচ বাড়বে ১৫ শতাংশ

মেহেরপুরে চলতি বছর ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মেহেরপুরে এ বছর ফসল উৎপাদনে কৃষকের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এতে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে বোরো মৌসুমের চাষাবাদ নিয়ে। অনেকে আমন ধান কেটে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করছেন। আবার কোথাও সেচপাম্প বসানো হচ্ছে। আমনের দাম পেয়ে কৃষকরা ছিলেন খুশি। কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চিন্তায় পড়েছেন তারা।

কৃষকের হিসাবে, ডিজেলের বর্ধিত মূল্যের কারণে ধান উৎপাদনে ১৫ শতাংশ খরচ বাড়বে। লিটারে ১৫ টাকা মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে গত বছরের চেয়ে প্রায় দুই টাকা বেশি ব্যয় হবে। তাই তারা চান প্রণোদনা ও সরকারি সহযোগিতা। প্রণোদনা না হলে কৃষি উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন কৃষক।

সরেজমিনে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা জানান, চাষাবাদ লাভজনক না হওয়ার কারণে জমি বিক্রি করে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন অনেকে। জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদে যুক্ত বর্গাচাষিরা সরে যেতে চাচ্ছেন। সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করছেন তারা।

জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, মৌসুমের শুরুতেই বোরোখেত চাষের উপযোগী করতে সেচসহ সার দিতে হয়। মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক কৃষকের ডিজেল কিনতেই পুঁজি ফুরিয়ে যাবে। ফলে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ ও মজুরি খরচ নিয়ে তারা চিন্তিত। জেলায় ৫৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদে ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ১৩২ কোটি টাকা।

কৃষকরা জানান, সরকার ডিজেল খাতে ভর্তুকি না দিলে তাদের পক্ষে বোরো চাষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মৌসুমের শুরুতেই তাদের বড় পুঁজির প্রয়োজন। এ অতিরিক্ত পুঁজির জন্য তারা মহাজনের ঋণের ফাঁদে পড়বেন।

সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নান বলেন, এ বছর সরকার আর্থিক প্রণোদনা না দিলে বোরো উৎপাদন কঠিন হয়ে যাবে।

বড় কৃষক ও সেচপাম্পের মালিকরা জানান, প্রতি বিঘায় সেচ দিতে কৃষকের বাড়তি খরচ ২ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবহন খরচ বাড়বে প্রতি বিঘাতে আরো এক হাজার টাকা। বাড়বে শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ আরো এক হাজার টাকা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সেচসহ প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়বে অন্তত চার হাজার টাকা। সরকারের কাছে ১০ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সার ও ডিজেলে ভর্তুকির টাকা নগদে দেওয়ার আহ্বান জানান কৃষক।

ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মালিক মতিয়ার রহমান বলেন, এত দিন অন্যের জমিতে সেচ দিতে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ টাকা নিতাম। জ্বালানি তেল ও নলকূপের যন্ত্রপাতিসহ মেশিন চালকের মজুরি বেড়েছে। ফলে প্রতি ঘণ্টায় সেচ খরচ ৬০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা নিতে হচ্ছে।

সবজিচাষি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপ আমাদের ওপর পড়েছে। এ বছর ধান উৎপাদনে কেজিতে গতবারের চেয়ে দু-তিন টাকা বেশি যাবে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সবজি উৎপাদনে চাষিরা আর লাভবান হতে পারবেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, জেলায় প্রায় ৪৬ হাজার সেচপাম্প রয়েছে। যার ৮৫ শতাংশ সেচপাম্প ডিজেল চালিত। জেলায় ৫৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। সেচনির্ভর এসব জমি সেচ দিতে জ্বালানি তেল ডিজেলের চাহিদা ১ কোটি ৪৮ লাখ লিটার। প্রতি লিটারে অতিরিক্ত ১৫ টাকা হিসেবে বছরে ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা গুনতে হবে কৃষককে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমিন জানান, শীতের শাকসবজি, ভুট্টা ও গম উৎপাদনে সেচ দিতে হয়। এরমধ্যে বোরো আবাদের সময় চলে এসেছে। এ সময় ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close