মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ২২ নভেম্বর, ২০২১

রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহ, খেজুর রসের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের গাছিরা। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকেও গাছিরা মেহেরপুরে এসে খেজুর বাগান লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে থাকে। তবে এ বছর উত্তরাঞ্চরের গাছিরা আসেননি। এ বছর স্থানীয় গাছিরা রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনে করছেন।

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরণ শুরু করেছে। রস আহরণের জন্য প্রথমে হাতে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে ওঠে গাছ চাছাছেলা করেন গাছিরা। পরে ছেলা স্থানে বাঁশের কঞ্চির নল বসানো হয়। সেই নল বেয়ে নেমে আসে খেজুর রস। ভোর থেকে সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত রস সংগ্রহ করেন তারা। পরে রস জাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। আবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছে কলস বাঁধা হয়। জেলায় এমন গাছির সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক।

সদর উপজেলার আশরাফপুর, আমদহ ও গোভিপুর গ্রামে খেজুর গাছের এবং গাছির সংখ্যা বেশি। তবে সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ দেখা যায়। কোনো কোনো গাছি আবার রস বিক্রি করে দেন। অনেকে রস কিনে নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন। সম্প্রতি ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ পোড়ানোর কারণে গাছ কমে যাচ্ছে। জেলায় এখনো আমদহ, গোভিপুর, পিরোজপুর গ্রামে খেজুর বাগান চোখে পড়ে। তাছাড়া জমির আইল, পুকুর পাড় আর রাস্তার ধারে রয়েছে খেজুর গাছ। পাঁচ থেকে ছয় বছর হলেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করা যায়। দো-আঁশ ও পলি মাটিতে জন্মানো গাছে বেশি রস হয়। কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত রস আহরণ করা হয়।

গাছিরা জানান, প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০টি গাছের রস থেকে তৈরি হয় ৪০ কেজি গুড়। শীত বেশি পড়লে রস উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।

সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের গাছি মুকুল মিয়া জানান, গাছের উপরিভাগের নরম অংশকে কেটে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের তৈরি নালা। আবার পাখিরা যাতে রস না খেতে পারে আর কোনো জীবাণু না ছড়াতে পারে সেজন্য আবার জাল বিছাতে হয়। একবার গাছ কাটার পর দুই থেকে তিন দিন রস পাওয়া যায়। গাছ একবার কাটার পর পাঁচ থেকে ছয় দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়।

আমদহ গ্রামের গাছি মুনতাজ আলী জানান, গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় মৌমাছির হুল সইতে হয়। রস বিক্রির টাকা যখন ঘরে তুলি তখন মৌমাছির হুলের কথা ভুলে যাই।

সমাজ কর্মী মাহবুবুল হক মন্টু বলেন, আগে পতিত জমি ও গ্রামীণ রাস্তার পাশেও সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ দেখা যেত। সেসব গাছ ইটভাটা খেয়ে ফেলেছে। অন্তত পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিটি সড়কের পাশে খেজুরগাছ লাগানো উচিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান,

কৃষি বিভাগ খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কৃষককে জমি ও তার আইলের পাশে গাছ লাগানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close