সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

কাজীপুরে কম্বল তৈরিতে ১০ সহস্রাধিকের কর্মসংস্থান

শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে কম্বল পল্লী সরগরম হয়ে উঠেছে। উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড় বাজারসহ আশপাশের প্রায় ১৩ গ্রামের ১০ সহস্রাধিক কারিগর তাদের পরিজন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরই এসব গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে শীত যেন বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়।

সরেজমিনে গিয়ে কম্বল তৈরিতে কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিমুলদাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, শ্যামপুর, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাইসহ অত্র এলাকার ১৩ গ্রামের ১০ সহস্রাধিক কারিগর মেশিন দিয়ে কম্বল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন তাদের দম ফেলানোর সময় নেই। গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় বা টুকরো কাপড় দিয়ে সেলাই করে কম্বল তৈরি করেন তারা। প্রতিদিন একেকজন দুই থেকে তিনটা কম্বল তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি কম্বল তৈরিতে মজুরি বাবদ ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে পান তারা। বাড়ির অন্যান্য কাজের ফাঁকে মেয়েছেলে সবাই মিলেমিশে কম্বল তৈরি করেন তারা।

এ বিষয়ে কারিগর শিমুলদাইড় গ্রামের বিউটি বেগম জানান, করোনাকালে হাতের কাজকর্ম না থাকায় সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও কম্বল সেলাই কাজ শুরু করেছি। ফলে দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ভালোই সংসার চলছে।

বিউটির স্বামী মোতাহার হোসেন শিমুলদাইড় বাজারে পাওয়ার মেশিনে কাজ করেন, সেখানে তার প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো মজুরি পান। আর এভাবেই তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। শীতের শুরুতে কম্বলের কাজ করে বিউটি মোতাহারের পরিবারেই মতো আরো অনেকের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

জানা গেছে, অত্র এলাকায় ১০ সহস্রাধিক পা মেশিন ছাড়াও শিমুলদাইড় বাজারে রয়েছে প্রায় দেড়শতাধিক যন্ত্রচালিত পাওয়ার মেশিন। পাওয়ার মেশিনের কর্মরত আবুল হোসেন জানান, প্রতিদিন চারজন কারিগর কাজ করে থাকেন। প্রতিটি পাওয়ার মেশিনের আওতায় ৯০০ থেকে ১ হাজার পিস কম্বল তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কারিগররা জনপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আয় করে থাকেন। শিমুল দাইড়বাজার এলাকায় তৈরি কম্বল দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার নিয়ে যায়। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও থেকে ব্যাপারী ও মহাজনরা কম্বল ক্রয় করে থাকেন।

শিমুলদাইড় বাজার কমিটির সভাপতি আবু তাহের জানান, এক সময় এই ব্যবসাটি স্থানীয় পর্যায়ে হলেও সময়ের ব্যবধানে এর পরিধি বেড়ে দেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। স্থানীয় ব্যাপারী ও মহাজনদের জন্য সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে এ ব্যবসায়ের আরো প্রসার পেত।

চালিতাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল জানান, শীতে শিমুলদাইড় বাজার কেন্দ্রিক শতকোটি টাকার ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। তবে হাতের কাছে ব্যাংক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপারী মহাজনদের টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়।

কাজীপুর ইউএনও প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ’৮০ দশকের শেষের দিকে শুরু হওয়া এই শিল্প এখন এলাকার গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তের মানুষের চাহিদা পূরণ করে চলেছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৭টি জেলায় শীতের কম্বল বিতরণে কাজীপুরের কম্বলের চাহিদা ব্যাপক। কাজীপুরে প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষিত স্বল্প শিক্ষিত কিংবা স্বশিক্ষিত নারী ও পুরুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তবে সরকারিভাবে বাজার সৃষ্টি করতে পারলে এই কম্বল শিল্পে কমপক্ষে লক্ষাধিক বেকারের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close