সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

ভালো নেই মুন্সীগঞ্জের রেডিমেড ঘর ব্যবসায়ীরা

দেশব্যাপী কদর থাকলেও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় মুন্সীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী টিনকাঠের রেডিমেড ঘর বিক্রি এখন মন্দা যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরী হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন একতলা, দুইতলা ও চৌচালা রেডিমেড টিনকাঠের ঘর। এসব ঘর তৈরির কাজকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জে বহু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হলেও আগের মতন ভাল নেই এ ব্যবসায় জড়িতরা। জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রেডিমেট ঘর বিক্রির শতাধিক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলাতে রেডিমেট ঘর তৈরী ও বিক্রির প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশী।

এদিকে সরজমিনে ঘর তৈরির কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে সারি সারি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময় তৈরী করা টিন-কাঠের ঘর। কোনটি একতলা, কোনটি দুই তলা, কোনটি চৌচালা। ঘর দেখে নয়ন জুড়াবে যে কারো। রেডিমেট ঘর তৈরীর প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ১০-৪০ জন কর্মচারী। আবার এসব ঘর বিক্রির আগে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নকশা দিয়েও ঘর তৈরি করা হয়। তারা ঘর তৈরী ছাড়াও ক্রেতার বাড়িতে প্রতিস্থাপন করতে পারদর্শী। মিস্ত্রিদের পাকা হাতে তৈরি টিন-কাঠের এসব ঘর এরমধ্যেই জেলার মানুষের কাছে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

ঘর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সিদ্দিক শেখ বলেন, ১৫ বছর ধরে ঘর বিক্রির এ ব্যবসায় জড়িত আছি। আগের মতন ব্যবসা এখন আর নাই। আলুর দাম কম থাকায় ও ঘর তৈরির নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর তেমন ঘর বিক্রি করতে পারিনাই। গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় ১৫০টি মত ঘর বিক্রি করলেও এবছর মাত্র ৩০টি ঘর বিক্রি হয়েছে। আগে ১ বান ভালো টিন ক্রয় করতাম ৪ হাজার ৯০০ টাকায় এখন সেই টিন কিনতে হয় ৮ হাজার ৩০০ টাকায়। ১ কেভি নাইজেরিয়ান লোহা কাঠের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা, এখন ২ হাজার ২০০ টাকা। ঘরের ১টি খাম তৈরিতে খরচ হত ৮০০ টাকা, সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন একটি খাম তৈরিতে খরচ হয় ১২০০ টাকা। কেরোসিন কাঠের দাম বেড়েছে কেভিতে ৪০০ টাকা। ঘর তৈরির নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদেরও বেশি দামে ঘর কিনতে হয়। একটি টপ ঘর বানাতে খরচ হয় সাড়ে ৫ লাখ আর বিক্রি করা হয় ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।

ঘর তৈরীর শ্রমিক মাদারীপুরের শিবচরের কাশেম বেপারী বলেন, একটি ঘর বিক্রি হওয়ার পর ক্রেতার বসত-ভিটেতে নিয়ে যাওয়া ও স্থাপন করাই আমার কাজ। আমার সঙ্গে ১৫ জনের একটি দল রয়েছে। বজ্রযোগিনীর মো. শাকিলের প্রতিষ্ঠানে এ কাজ করে থাকেন। ক্রেতার বসতভিটের দূরত্ব অনুযায়ী মজুরী পেয়ে থাকেন। একটি ঘর স্থাপনে অন্তত ৩ দিন লেগে যায়। এতে তারা ঘর প্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে ঘর স্থাপন করা হয়।

এদিকে জেলা সদরের বজ্রযোগিনীর মো. সাকিল একজন রেডিমেট ঘর তৈরীর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার এখানে প্রায় ৭০ জন কর্মচারী রয়েছেন। এদের একেক জনের এক কাজ। কেউ কারুকার্য করেন। কেউ ঘর অন্যত্র প্রতিস্থাপন করেন। আবার কেউ শুধু মাত্র ঘরের কাঠ প্রস্তুত কাজ করে থাকেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আগে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৪০টি রেডিমেট ঘর বিক্রি করেছি। এখন করোনার কারনে বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১০টি ঘর। একটি ঘর বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় ঘর বিক্রি কমেছে। এতে করে এ ব্যবসায় এখন ভালো সময় যাচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close