আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর)

  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

১৬ বছর ধরে এক হাজার বিঘা জমির রেজিস্ট্রি বন্ধ

গুরুদাসপুরে খাজনা খারিজ ছাড়াই স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দোস্তনানগর গ্রামে প্রায় ১ হাজার বিঘা কৃষিজমির রেজিস্ট্রি বন্ধ রয়েছে। বাপ-দাদার যুগ থেকেই এসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন তারা। কিন্তু সরকারি খাজনা খারিজ ছাড়াই স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ওই মৌজার জমিগুলো ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রায় ১৬ বছর ধরে ওই মৌজায় রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় কৃষকরা বিপাকে ও হতাশায় পড়েছেন। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গ্রামের সবাই দোস্তনানগর মৌজার প্রায় ১ হাজার বিঘা আয়তনের বিভিন্ন ফসলি জমির মালিক। রেজিস্ট্রি চালু থাকাকালীন কিছু জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করেন কৃষকরা। কিন্তু ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হঠাৎ ওই মৌজার জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায়। কারো এক বিঘা, কারো ১০ বিঘা, কারো ২০ বিঘা জমি আছে রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই দোস্তনানগর মৌজায়।

বর্তমানে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে জমিগুলো। তবুও কেউ জমি কিনতে চাচ্ছেন না। অথচ ২০১৪ সাল পর্যন্ত জমিগুলোর দাম বিঘাপ্রতি ১০ লাখ টাকা ছিল। এখন এক বিঘা জমির দাম ৪ লাখ টাকা। কারণ ওই মৌজার সব জমির রেজিস্ট্রি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যার ফলে জমি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষের শঙ্কা রয়েছে। রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, জমিগুলো রেজিস্ট্রি করার লক্ষ্যে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্যারদের কাছে এলাকাবাসীকে নিয়ে সমস্যাটি সমাধানের জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছি।

সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ওই মৌজায় আমার সাড়ে ৮ বিঘার মতো জমি আছে। বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিটি সেই সময় রেজিস্ট্রি করেছি। পরে অন্যের জমি কিনেও রেজিস্ট্রি করেছি। তখন জমির খারিজ খাজনা সবকিছুই দিতে হয়েছে। আবার ওই মৌজার বেশ কয়েকজন জমির মালিক মারা যাওয়ার আগে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীরা নিয়ে জমিগুলোতে চাষাবাদ করে আসছেন। কোর্টে এফিডেভিট করেও কৃষকদের দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না।

এদিকে হয়রানির শিকার কৃষক সলেমান আলী বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে আমার ভাই-বোনেরা জমি পান। তাদের কাছ থেকে কেনা ওই জমিতেই ছয় বছর ধরে চাষাবাদ করছি। কিন্তু জমির রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছি। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জাবের আলী ১০ বিঘা জমি কিনলেও রেজিস্ট্রি না হওয়ায় সরকারের নেক দৃষ্টি কামনা করেছেন।

দোস্তনানগরের সেনাসদস্য রওশন সরদার বলেন, স্থানীয় মুজিবুর রহমানের থেকে তিন বিঘা জমি কিনে রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে হতবাক হয়েছি। রেজিস্ট্রি করতে গেলেই সরকারি অফিসের লোকজন বলেন জমি তোমাদের না।

এদিকে জমি বিক্রেতা ফরিদা, লুৎফর, আমিনসহ অনেকে জানান, জমির রেকর্ড নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। জমির সিএস ও এসএ বর্তমানে জমির মালিকদের বাপ-দাদার নামে রেকর্ড রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বস্ত লোকজনের কাছে জমি বিক্রি করছেন অনেকে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ বিঘা জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়নি।

ইউএনও মো. তমাল হোসেন ও এসিল্যান্ড আবু রাসেল বলেন, মৌজার প্রত্যেকটি জমির ওয়াকফতে জমিদার জাহাঙ্গীর খানের নাম রয়েছে। সমস্যাটির সঠিক সমাধান করার ক্ষমতা উপজেলা প্রশাসন ও ডিসি অফিসের নেই। গ্রামের কৃষকদের পক্ষে রেজিস্ট্রি ওপেন করে দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রতিবেদনের রিপ্লাই চিঠি পাইনি। জমি ক্রেতারা যদি সমস্যাগুলো তুলে ধরে মামলা করেন তাহলে বিজ্ঞ আদালত জমির ওয়াকফ পরিবর্তন করে খাজনা খারিজ চালু হতে পারে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুস এমপি বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে দোস্তনানগর মৌজার ওই জমিগুলোর খাজনা পাচ্ছেন না। কৃষকদের মালিকানার জমি রেজিস্ট্রি সচল করাসহ সব ভোগান্তি দূর করতে প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close