মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

২০ ইটভাটার থাবা

আইনের তোয়াক্কা না করেই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি ইটভাটা। এসব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নিবন্ধনহীন ভাটাগুলো উৎপাদনে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, ইটভাটা মালিকরা বলছেন, নিবন্ধন না থাকলেও মূল্য সংযোজন কর, আয়কর এবং ইউপি থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। অন্যদিকে, প্রশাসন বলছে, যেকোনো অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে তারা তৎপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর, নাটশাল, খাজুর, লক্ষণপুর, বাগডোব, চেরাগপুর, কালুশহর, আজিপুর, হাট চকগৌরীসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি ইটভাটা। এদের কারও নেই লাইসেন্স। আবার আইনও মানছেন না কেউ। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ভাটা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। উৎপাদন মৌসুমে এসব ইটভাটা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ব্যবহার করে। এ পরিমাণ জমিতে প্রত্যেক মৌসুমে ৬ হাজার মণ ধান উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির উপরিভাগের ঊর্বর মাটি। এতে জমির ঊর্বরা শক্তি হ্র্রাস পাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আবার কয়েকটি ভাটায় নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে কাঠ পোড়ানো হয়। এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ফসল ও গাছপালা নষ্টের পাশাপাশি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইটভাটা চালানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে কারাদ-ের বিধান রয়েছে। এছাড়া ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। কাগজে-কলমে এমন নিয়ম থাকলেও তা মানতে নারাজ ইটভাটা মালিকরা। প্রশাসনের কঠোরতার অভাবকে পুঁজি করে অবৈধ ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর।

বেসরকারি এক হিসেব মতে, একটি ইটভাটা প্রতি মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে এক ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫ থেকে ১২ একর জমির। সে হিসেব অনুযায়ী উপজেলার ২০টি ইটভাটার জন্য বছরে ৩০০ একর জমির মাটি কাটা হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা পরিষ্কারের কাজ করছেন শ্রমিকরা। চলছে ইট তৈরির প্রস্তুতি। ফসলি জমিতে ইট শুকানোর চাতালও তৈরি করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও ভাটা চত্বরে মাটি স্তূপ করা হচ্ছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। এরপরই শ্রমিকরা ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে ভাটায় নিয়ে আসবেন। এই মাটি পুড়িয়ে তৈরি হবে ইট।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম সরকার জানান, সমিতির সদস্যদের লাইসেন্স নবায়ন নেই। মালিকদের আইন মেনে ইট বানাতে বলা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, মাটির উপরিভাগে যে জৈব পদার্থ থাকে তা নিচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে কয়েক বছরে প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না। এতে ফলস উৎপাদন কমে যাবে বলেও জানান তিনি।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, মহাদেবপুরের কোনো ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থানায়

মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করতে পারেন না। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

ইউএনও ও উপজেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মিলন জানান, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close