দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

মেহেরপুরে কাদাজমিতে পেঁয়াজ চাষে সাফল্য

জমিতে সেচ দিয়ে কাদা তৈরি করে ধান লাগানোর মতোই মেহেরপুরের কৃষকরা পেঁয়াজের চাষ শুরু করেছেন। যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে শুকনো মাটিতে পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন কৃষক। সম্প্রতি মেহেরপুরের চাষিরা ধরন বদলিয়ে আমন ধান আবাদের মতো কাদা তৈরি করে রোপণ করেছেন পেঁয়াজের চারা। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের ফলন নিয়ে চিন্তিত হলেও হাল ছাড়েননি কৃষি বিভাগ ও উদ্যোমী চাষিরা। চার বছর ধরে জেলায় কাদাজমিতে পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কাদায় লাগানো রোপণ করা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু ফলনই নয়, নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘাতে গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন অনেকেই। আগামীতে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এ জেলায় এবার নতুন পদ্ধতিতে ২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। বারি পেঁয়াজ-৫-সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছেন চাষিরা।

মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ মাস্টার বলেন, শীতকালে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সেটি ভারতীয় বীজ থেকে উৎপন্ন ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। আবার চাহিদা ও দাম না পাওয়ায় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এবার ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজের পরিবর্তে কয়েকজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন ও ভালো দামে বিক্রি করে ওই জমিতেই আবার শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ করছেন। পেঁয়াজ আবাদের এ ধারায় দেশের পেঁয়াজ সংকট দূর হবে বলে আশা করছেন অগ্রগামী এসব কৃষক।

মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামের কৃষক ওহাব আলী জানান, তিনি ৫ বিঘা বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এই পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকি কম। নভেম্বর থেকেই এই পেঁয়াজ উত্তোলন করা যাবে বলে তিনি জানান। ফলে চাষিরা সারা বছর পেঁয়াজ চাষ ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে পেঁয়াজের ঘাটতি যেমন কমবে, তেমনি চাষিরাও সারা বছর ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, ১৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি এ বছর ২০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন। ৯৫ থেকে ১১০ দিনে এই পেঁয়াজ বিঘায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ প্রতি বিঘায় চাষ করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, জেলায় বিভিন্ন চাষিদের মাধ্যমে ২৫ হেক্টর জমিতে বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ করা হয়েছে। ভালো ফলন হবে এবং চাষিরা লাভবান হবে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, নতুন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে এ জেলা কৃষিতে যুগান্তকারী এক পরিবর্তনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। লাভ ও ফলনে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে এ জেলায় আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close