নওগাঁ প্রতিনিধি
রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্যে রোগীদের ভোগান্তি
নওগাঁর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল
হাসপাতালের চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হচ্ছেন আবদুস ছাত্তার (৫০) নামের একজন রোগী। বের হওয়া মাত্রই পাঁচ থেকে ছয় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরেন। তার হাত থেকে চিকিৎসা নির্দেশিকাটি নিয়ে দেখলেন চিকিৎসক কী কী ওষুধ লিখেছেন। আরেকজন মোবাইল ফোনে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলছেন। পরে রোগীকে নির্দেশিকাটি ফেরতও দেননি। প্রতিদিন এমন দৃশ্য দেখা যায় নওগাঁর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের এমন হেনস্তায় বিব্রত রোগী ও অভিভাবকরা। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ বলছে, এ সমস্যার সুরাহা হবে, তবে সময় লাগবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩০ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিভদের আচরণে। চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর ভর্তি রোগীদের কাছে চলে যাচ্ছেন চিকিৎসা নির্দেশিকা দেখতে। এতে যেমন বিব্রত রোগীরা, অন্যদিকে বেড়েই চলছে রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য।
ঠান্ডাজনিত কারণে ৮ মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে আসা দেবাশীষ সাহা ভর্তি করিয়েছেন ওই হাসপাতালে। তিনি বলেন, দুই রিপ্রেজেন্টেটিভ এসে চিকিৎসা নির্দেশিকা দেখতে চাইলেন। আমি দেওয়ার আগেই তারা টেবিলে রাখা চিকিৎসা নির্দেশিকা সিøপটি নিয়ে ছবি তুললেন। কেবিনে প্রবেশ করে এমন আচরণ কাম্য নয়।
শিরিন বিবি নামের একজন সেবাপ্রত্যাশী জানান, ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই আমার হাত থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছে। হাসপাতালে সেসব রোগী আসেন তাদের মধ্যে অনেক গুরুতর রোগীও থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে তারা কেন এমনভাবে বিব্রত করে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিপ্রেজেন্টেটিভ জানান, আমরা সেলস বিভাগে কাজ করি। কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখলে চিকিৎসকদের বিশেষ উপহার দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীদের থেকে তথ্য নিই। এটা চিকিৎসকরাও জানেন।
ডা. জান্নাতুন নাঈম বলেন, এখানে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগী দেখি। এ সময় রিপ্রেজেন্টেটিদের সঙ্গে কথা বলার সময় হয় না। রোগীর জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন সেটাই প্রেসক্রিপশনে লেখা হয়।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রোগীদের অনুমতি নিয়ে প্রেসক্রিপশন দেখতে বলা হয়েছে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাজের অংশ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ভিজিট করা। যদি কেউ প্রেসক্রিপশন না দেখাতে চান তবে তাকে জোর করা যাবে না।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ইবনে ইমাম জানান, সেবাপ্রত্যাশীরা এখন পর্যন্ত রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কোনো অভিযোগ করেননি তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেইনি। যদি কোনো চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির স্বার্থরক্ষা করে ওষুধ লিখেন তবে রোগীর স্বাস্থ্য বিপন্ন হতে পারে। রোগীর জন্য যেমন ওষুধ দরকার চিকিৎসকের ঠিক তেমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করা উচিত। রিপ্রেজেন্টেটিভদের মন জোগাতে ওষুধ লেখার প্রবণতা অনেক চিকিৎসকের রয়েছে যা অস্বীকার করছি না। তবে এ সমস্যার সুরহা করতে কিছুটা সময় লাগবে।
"