আজাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা

  ১০ অক্টোবর, ২০২১

চুয়াডাঙ্গায় সাব-রেজিস্ট্রার নেই তিন উপজেলায়

সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় জেলা রেজিস্ট্রার থাকেন নিজ বাড়ি কুড়িগ্রামে। জমি কেনাবেচায় অচলাবস্থা

চুয়াডাঙ্গায় চার উপজেলার তিন কার্যালয়েই নেই সাব-রেজিস্ট্রার। মাত্র একজন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে চারটি কার্যালয়ের কার্যক্রম। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ফলে জমি কেনাবেচায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে রয়েছেন এম নাফিজ বিন জামান। দলিল লেখকদের অনুরোধে তিনি জেলা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এমতাবস্থায় জমি ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখকসহ সেবাপ্রত্যাশীদের নানা রকমের হয়রানি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন সমস্যা চলে আসলেও তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা ও লকডাউনের প্রকোপের কারণে প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল চারটি উপজেলার সব রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সংকট কাটেনি জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে সেখান থেকে ক্লোজ করে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার স্মৃতিকনা দাস ও জীবননগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমান বদলিজনিত কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। সেই থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলো শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করা এম নাফিজ বিন জামান কোনো মতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তিনি একাই জেলার চারটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষ।

ভুক্তভোগী আনিসার ও জয়নাল শেখ জানান, সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের দোহায় দিয়ে রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে চলছে প্রকাশ্যে ডাকাতি। রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলে সাব-রেজিস্ট্রারের নামে কিছু দলিল লেখক ও দালাল প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হয়রানি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সকাল থেকে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল জমা নেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে দলিল সরিয়ে অন্য দলিল রেজিস্ট্রি করার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে গিয়ে সারা দিন বসে থেকে জমি রেজিস্ট্রি না করেই ফিরে যাচ্ছেন। রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলো এখন ডাকাতদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কয়েক দিন যোগাযোগ করতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার কার্যালয়ে উপস্থিত কর্মচারীরা তার মোবাইল ফোন নম্বর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই তার বাড়ি কুড়িগ্রামে থাকেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন এখন তার কার্যালয়ে ফিরছেন। তবে কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের ছুটির বিষয়টি তারই কার্যালয়ের টাইপিস্ট উজ্জ্বল জানেন না বলে জানান। তবে রেজিস্ট্রার বিভিন্ন কাজের কারণে জেলার বাইরে থাকেন বলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন। জেলার সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের বিষয়টি সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিবন্ধন অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। বদলি প্রক্রিয়ার কাজ করেন আইন মন্ত্রণালয়। তবে আলমডাঙ্গা উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার পদে একজনকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এসে যোগদান করবেন। আশা করা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রারের পদ তাড়াতাড়ি পূরণ হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close