এম কবির, টাঙ্গাইল

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শ্রেণিকক্ষে বন্যার পানি বাড়ির উঠানে পাঠদান

দীর্ঘ দেড় বছর পর সরকারের ঘোষণায় টাঙ্গাইলে খুলেছে সকল স্কুল-কলেজ। এতে সারা দেশের ন্যায় প্রাণ ফিরেছে টাঙ্গাইলের স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের নির্জীব ক্যাম্পাস। অনেক দিন পর সহপাঠীদের কাছে পেয়ে আবেগে-আপ্লুত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরেছে প্রাণের সঞ্চার। এমন চিত্র সব জায়গায় দেখা গেলেও রয়েছে কিছু ভিন্ন চিত্র। যেখানে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ ও স্কুলে যাওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় বসতবাড়ির কক্ষে, উঠানে ও প্রতিষ্ঠানের ছাদেও ক্লাস চলছে।

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় বাড়ির উঠানে পাঠদান করছে শিক্ষার্থীরা। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাওয়ার কথা ছিল স্কুলে। কিন্তু স্কুলে বন্যার পানি থাকায় তারা স্কুলের পার্শ্ববর্তী বাড়িতে পাঠদান করছে তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাসাইল সদর ইউনিয়নের রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের জমিদাতা হাজি নজির হোসেনের বাড়ির উঠানে ও ঘরের ভেতর পাঠদান শুরু করেছেন। সকালে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকা চালিয়ে পিঠে ব্যাগ, মুখে মাস্ক পরে প্রবেশ করছে ওই বাসায়। এরপর তারা হাত ধুয়ে বাড়ির উঠানে ও ঘরে প্রবেশ করেন। বসার ক্ষেত্রেও একজন অপরজন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছিল।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার জানান, ক্লাসে এসে আমি খুবই খুশি। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমি নৌকা নিয়ে ক্লাস করতে এসেছি। আমাদের বিদ্যালয়ে পানি ওঠার কারণে আমরা এখন হাজি নাজির দাদার বাড়িতে ক্লাস করছি। বন্যার পানি থাকায় আমাদের গ্রামের সব সড়ক ডুবে গেছে। এজন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নাই। পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্র জামিল হাসান বলেন, আমাদের এলাকা নিচু হওয়ায় বন্যা হলেই রাস্তাঘাটে পানি উঠে যায়। নৌকা ছাড়া আমরা চলতে পারি না। আমাদের স্কুলেও পানি উঠেছে। তাই আমাদের বিদ্যালয়ের পাশের বাড়িতে ক্লাস করছি। তবে নিজেদের স্কুলে ক্লাস ও মাঠে খেলতে পারলে অনেক ভাল লাগতো।

বাসাইল রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা আক্তার পপি বলেন, বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিদ্যালয় খোলায় কোমলমতি শিশুদের আনন্দের দিন ছিল। কিন্তু সেই আনন্দদায়ক দিনটিকে উপভোগ করার সুযোগ করে দিতে পারিনি। বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করতে পারিনি। বাড়ির উঠানে ও ঘরের ভেতরে পাঠদান করতে হচ্ছে। এখনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ২-৩ ফিটের মতো পানি রয়েছে।

বাসাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল জানান, উপজেলায় ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরই মধ্যে ৪৯টিতে বন্যার পানি উঠেছিল। বন্যার পানি কমায় পাঁচটি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২টি বিদ্যালয়ের পানি নেমে গেছে। বাকি ৩টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি থাকায় ২টি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলায় এবং একটি বিদ্যালয়ের ক্লাস বাড়ির উঠানে ও ঘরের ভেতরে চলছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম জানান, যেসব এলাকার স্কুলগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে সেগুলোতে নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাস চলবে। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পানি রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাকি স্কুল, কলেজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close