কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পাট উৎপাদনে লক্ষ্য ছাড়িয়েছে

ফরিদপুরে গত ১০ মৌসুমে আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর

‘পাটের রাজধানী’খ্যাত ফরিদপুরে পাটের ফলন ভালো হলেও, দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ চাষিরা। চলতি মৌসুমে এই জেলায় পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১০ লাখ বেল (১৮০ কেজিতে এক বেল)। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০২০-২১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেন চাষিরা এর বিপরীতে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।

আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। গত ১০ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।

জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপন করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে। আবার পাট কাটায় ও পাট নেওয়া-ধোয়ায় ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

বর্তমান জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে মণপ্রতি পাটের দর কৃষক পাচ্ছে প্রকার ভেদে ৩ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।

সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথিন্দ্রনাথ সিকদার নিপু জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়েছিল। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভালো পাটের দর মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানে পাটের দর ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় বাজারে পাট বাজারে কম তুলছেন।

বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাটচাষি আশুতোষ মালো জানান, খেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে, তবে খরচ ও যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি চাষিদের। এই কারণে আমরা মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে পেলে বেশ খুশি হতাম।

সালথার আরেক চাষি নাছির উদ্দিন জানান, সরকার যেভাবে প্রতি বছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ থাকলে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেতেন।

এদিকে পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুটেমিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, যারা পাটকলের সঙ্গে যুক্ত তাদের দাবি হলো মিলের উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে যদি পাট ক্রয়মূল্যে পার্থক্য বেশ থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে পণ্যে উৎপাদন মূল্যেও সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নিধারণ দরকার। এতে উভয়ের লাভ হবে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী জানান, সোনালি আশ খ্যাত ফরিদপুরের উৎপাদিত পাটের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। এ জেলার চাষিরা অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় অনেক বেশি পাটের আবাদ করেন।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। তবে এর থেকে বেশি উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম হচ্ছে, কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ করতে খরচ হয়েছে বেশি। তবে মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দর পেলে কৃষক লাভবান হতেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close