সাজাদুল ইসলাম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

  ০৫ আগস্ট, ২০২১

চায়না জালে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে অভিনব পদ্ধতিতে তৈরি করা অবৈধ চায়না জাল বা ডারকি জালের ফাঁদ পেতে নিধন করা হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। ফলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্যসম্পদ বিলুপ্তির আশঙ্কা করছে অনেকেই। অবৈধ এসব জাল দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা মা মাছ নিধন করলেও মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের নেই নজরদারি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনের লোকজন তাদের খেতখামারে বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড় নিধনের জন্য এ জাল তৈরি করে। এক থেকে দেড় ফুট প্রস্থ, ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ক্ষুদ্র ফাঁস দিয়ে এই জাল তৈরি। লোহা রিং দিয়ে ঢোলক আকৃতি ও মাঝে মাঝে চতুর্ভুজ আকারের লোহা দিয়ে তৈরি এই বিশেষ ফাঁদ। একটি করে জালে ৪০ থেকে ৫০টি করে খোপ আছে। বিশেষ কৌশলে এই জালের দুই মাথা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফাঁদ পেতে রাখে খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের তলদেশ দিয়ে। জালের কাঠামোতে লোহা থাকায় জালটি পানির তলদেশে পৌঁছায়। এই জাল ক্ষুদ্র ফাঁসের কারণে সেই পথ ধরে ছোট থেকে বড় যে কোন ধরনের মাছ চলাচল করলে অনায়াসে জালের ভেতরে প্রবেশ করবে। মাছ প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। এ জালে আটকা পড়ে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতের মাছ। এমনকি ছোট পোনাও আটকা পড়ে যা কোনো কাজে লাগে না। পরে সেগুলো ফেলে দেন মাছ শিকারিরা।

সরেজমিনে উপজেলার হাতিয়া ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে ডিঙি নৌকা দিয়ে চায়না জাল বা ডারকি জালের ফাঁদ পেতে জেলেরা মাছ শিকার করছেন। এসব এলাকায় প্রতিটি মাছ ধরা নৌকার জেলের কাছে ২৫ থেকে ৩০টি করে এই জাল রয়েছে।

স্থানীয় জেলে সুমন ও মনোরঞ্জন দাসের কাছে চায়না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তারা বলেন, হামার বাপ দাদাদের হাত ধরে মাছ ব্যবসায় এসেছি। মাছ শিকার আমাদের প্রধান পেশা। স্থানীয়ভাবে আমাদের মাঝি বলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারা দিন নদী থেকে যা মাছ পেতাম তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চলত। এখন আর ডারকি জালের জন্য মাছও পাওয়া যায় না। যারা কখনও মাছ ব্যবসায় আসেনি এখন তারাও ডারকি জাল নদীতে ফেলে রাখে। আর এসব জায়গায় আমরা জাল ফেলতে পারি না। এ নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে ঝগড়াঝাটিও হয়। শুধু সুমন দাস আর মনোরঞ্জন নয় উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মৎস্যজীবী চরম দুর্দিনে পড়েছেন। 

হাতিয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে স্বদেশ চন্দ্র বলেন, সরকার চায়না বা ডারকি জাল নিষিদ্ধ করছে কিনা জানি না। এই জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। জালগুলো ঢাকাতে পাওয়া যায়। টাকা বিকাশ করলেই জাল পাঠিয়ে দেয়। প্রায় ৫০ থেকে ৫২ হাত লম্বা ডারকি জাল ছয়টি কিনেছি ২৬ হাজার টাকায়। মাছের ক্ষতি হলেও জাল কেনার টাকা তুলতে এবং পরিবারকে বাঁচাতে বাধ্য হয়েই এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন তিনি।

একই এলাকার জেলে শ্রীরাম চন্দ্র দাস বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে মাছ শিকার করছি। কিন্তু এ বছরের মতো মাছের সংকট আগে দেখিনি।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন বলেন, চায়না জাল, স্থানীয় কারেন্ট ও ফাঁসি জাল এগুলো দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছেন জেলে ছাড়াও অপেশাদাররা। ফলে দিন দিন বহুজাতের মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম মাছ কাগজ-কলমে দেখবে বাস্তবে নয়। 

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিফুর রহমান সরকার বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অবৈধ এসব জাল দিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। লকডাউন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close