মেলান্দহ (জামালপুর) ও মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০১ আগস্ট, ২০২১

ব্রহ্মপুত্রে ভাঙনের মুখে মহাসড়ক ও সেতু

টঙ্গীবাড়িতে পদ্মার ভাঙনে আট বসতঘর বিলীন

যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জামালপুরের মেলান্দহে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী গোবিন্দি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদ তীরবর্তী বাসিন্দারা। বাড়িঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল ভাঙন রোধে দ্রুত প্রতিকার চেয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভাঙনে এরই মধ্যে ১০ থেকে ১২টি পরিবারের বসতভিটা, ১৩ থেকে ১৫ বিঘা ফসলি জমি, আট বিঘা জমির কলাবাগান, ১২ বিঘা জমির কাঠবাগান ও একটি রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক বছরে বিলীন হয়েছে একই এলাকার একটি ঈদগা মাঠ, একটি পুকুর ও একমাত্র শ্মশান ঘাট। এ ছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জামালপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়ক। সেইসঙ্গে ডেফলা ব্রিজ খ্যাত ৫৬০ মিটার দীর্ঘ শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতুটিও হুমকিতে রয়েছে।

নদীভাঙনে গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমাদের জমিজমা ও বাড়িঘর নদীয়ে ভাংতাছে। আমার ভাই-ভাতিজারা চেয়ারম্যানকে জোড়হাত করে বললেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নাই।’

ভুক্তভোগী ফারুক বেপারী বলেন, ‘নদীয়ে জমিজমা সব ভাইঙা নিছে, শেষ সম্বল বাড়ির ভিটাও ভাঙতাছে। হাতে কোনো টাকা পয়সা নাই। বউ পোলা নিয়া আমি এহন যামু কই? খামু কী?’

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এইখানে ঈদগা মাঠে নামাজ পড়ছি। আশপাশে কত কলার বাগান, কাঠের বাগান আছিল। চোখের সামনে সব নদী হইয়ে গেল।’

ইউএনও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি অতিদ্রুত একটা সমাধান পাব।

এদিকে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ মোবাইল ফোনে জানান, পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন কবলিত এলাকা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, টঙ্গীবাড়িতে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে পূর্ব-হাসাইল এলাকার আটটি পরিবারের বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় একই স্থান থেকে গ্রামবাসী ভাঙনের কবল থেকে ছয়টি বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ওই এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে একেবারে ধীরগতিতে পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তীব্র আকারে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে নদী-সংলগ্ন কয়েকশ মিটার এলাকার জমি ও আটটি বসতঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এ সময় একই স্থানের আরো ছয়টি বসতঘর অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়া হলেও বসতঘরের ভিটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

অপরদিকে পদ্মার ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে এই এলাকার দাতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ স্থানীয় শত শত পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ, কবরস্থানসহ নানা স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শী বাবু মিয়া বলেন, হঠাৎ করে নদীতে ভাঙন দেখা দিলে আটটি পরিবারের বসতঘর ও তাদের ভিটেমাটি নদীতে ভেঙে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে চোখের পলকে তলিয়ে গেল ঘরগুলো।

এদিকে এ ব্যাপারে হাসাইল বানারী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হালদার বলেন, হঠাৎ করে পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিলে নিমিষেই নদীতে আটটি ঘর বিলিন হয়ে গেছে। ছয়টি ঘর অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ভাঙনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভাঙন সংলগ্ন এলাকার আশপাশের লোকজনকে বসতঘর সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close