গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) ও শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

  ৩১ জুলাই, ২০২১

পদ্মায় ভাঙন ঝুঁকিতে লঞ্চ ও ফেরিঘাট

শিবচরে আড়িয়াল খাঁয় আতঙ্কে ৫০০ পরিবার

গত কয়েক দিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে লঞ্চঘাট থেকে ১নং ফেরিঘাট এলাকার মধ্যে তিনটি পয়েন্টে অন্তত ৫০ মিটার এলাকার জিওব্যাগ ধসে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ফেরিঘাটসহ সংলগ্ন মজিদ শেখেরপাড়ার দেড় শতাধিক পরিবার। এছাড়া ৭নং ঘাট ও ঘাটসংলগ্ন সাত্তার মেম্বারপাড়ার অর্ধশত পরিবারও চরম হুমকিতে রয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে লঞ্চঘাট এলাকায় জিওব্যাগ ফেলছে। হঠাৎ করে জিওব্যাগ ফেলার কাজ বন্ধ করে দেন তারা। তাদের গাফিলতির কারণে আজ নতুন করে পাঁচ পরিবারের ভিটামাটি নদীতে চলে যায়। এর প্রতিবাদে ভুক্তোভোগীরা ঘরের টিনের চালা দিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবোরোধ করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাবেক ইউপি সদস্য বাবু মোল্লা, বেনজির আহমেদ, বিলাস ব্যাপারীসহ কয়েকজন বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে এখানে ভাঙন ঝুঁকির বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ কতৃ3পক্ষকে বলে আসছি। দিন দশেক আগে কিঝু জিওব্যাগ ফেলেছিল। কিন্তু গত তিন দিন ধরে এখানে তিনটি পয়েন্টে ৫০ মিটারের মতো এলাকা ধসে গেলেও তারা কোনোই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরেকটু পানি বেড়ে গেলে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে। এখানকার অন্তত ২০০ পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন।

দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মন্ডল জানান, দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও ঘাটসংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম এবং ঘাটের উজানে আরো কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ঘাটগুলো ছাড়াও হুমকিতে রয়েছে বহু পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাউবো ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

গোয়ালন্দ ইউএনও মো. আজিজুল হক খান মামুন বলেন, ভাঙন পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবো ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মাদারীপুরের শিবচর প্রতিনিধি জানান, আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি ও প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এলাকার মধ্য উপজেলার শিরুয়াইল, নিলখী, বহেরাতলা দক্ষিণ, সন্যাসীরচর, বন্দরখোলা ও চরজানাজাত ইউনিয়নের নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব এলাকায় প্রায় ৫০০ পরিবার নির্ঘুম কাটাচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈর, নিলখী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের কলাতলা গ্রাম ও বহেরাতলা গ্রাম, শিরুয়াইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈর গ্রাম, সন্যাসীরচর ইউনিয়নের কাজিরসূরা গ্রাম, মাদবরেরচর ইউনিয়নের পুরানকান্দি গ্রামসহ পদ্মা পাড়ের কয়েকটি এলাকায় প্রতি বছরই নদীভাঙন দেখা দেয়। এরই মধ্যে ভাঙনে ওই সব এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পাকা সড়ক, হাটবাজার, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি কলেজ, কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, পাঁচটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

বহেরাতলা ইউনিয়নের কলাতলা গ্রামের নান্নু মাদবর নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘গত কয়েকদিনে আমার তিন বিঘা জমি আড়িয়াল খাঁয় বিলীন হয়েছে। এখনো ভাঙছে। এছাড়াও আমার বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তা চলতে থাকলে এ বছর ঘরবাড়ি টিকবে না। আমাদের দাবি দ্রুত এ এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হোক।’

মাদারীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ‘শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল, বহেরাতলা ও নিলখী ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। গত ১৫ জুলাই থেকে তিন দিনে শিরুয়াইল ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকায় ১০ হাজার ৮২০টি জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। বহেরাতলা এলাকায় ১৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে। গত বুধবার ৪ হাজার ২৯ ব্যাগ ও বৃহস্পতিবার ৩ হাজার ৬৯৬ ব্যাগ ফেলা হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close