আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

  ৩০ জুলাই, ২০২১

এক পাহাড়ে ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার

কোনোভাবে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশাসন শত সচেতনতা চালালেও কেউ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ছাড়তে রাজি নয়। একটি পাহাড়ে বহুবার উচ্ছেদ করা হলেও ফের সেই পাহাড়ে বসতি গড়ে তোলে মানুষ। কক্সবাজার শহরেই একটি পাহাড়ের ঢাল ও পাদদেশে তিন শতাধিক পরিবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। চলমান ভারী বর্ষণে এসব পরিবারের ঘরবাড়ির ওপর পাহাড় ধসে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। তবে একপ্রকার উপায়হীন হয়েই এভাবে বিপজ্জনক কায়দায় পাহাড়ের নিচে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।

কক্সবাজার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের খাজা মঞ্জিল এলাকার একটি পাহাড়ের নিচে তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। তাদের বেশির ভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বিকল্প উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বছরের পর বছর তারা সেখানে বসবাস করে আসছেন।

খাজা মঞ্জিল পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, ‘প্রায় আট বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। আমার বাবা স্থানীয় এক ব্যক্তি থেকে ঘর করার জন্য জায়গাটি কিনেছিলেন। সমতল ভূমিতে ঘর করার জন্য অনেক বেশি টাকা প্রয়োজন। আমাদের অত বেশি টাকা নেই, তাই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পাহাড়ের ঢালে বসবাস করছি।’

এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এই পাহাড়টির নিচে ৩০০-এর বেশি পরিবার বসবাস করছে। বর্ষা এলে সবাই পাহাড় ধসের আতঙ্কে থাকি। ভারী বর্ষণে অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাসায় চলে যায়। কষ্ট হলেও এখানে বসবাস ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।’

পাহাড়ে বসবাসকারী রহিমা খাতুন বলেন, ‘বাইরে আমাদের ঘরবাড়ি নেই। কোথাও স্থান নেই তাই সন্তানদের নিয়ে পাহাড়ে বসতবাড়ি করেছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে ঝড়-বৃষ্টি হলেও ভয়-ভীতি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছি। সরকারিভাবে কোনো স্থান হলে আমরা পাহাড় থেকে চলে যাব।’

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এরমধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর বনভূমি। পাহাড়ি জমিতেই বসবাস করছে ১৩ হাজার ৮২৬টি পরিবারের তিন লাখ মানুষ। তারা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব লোকজনকে অন্য কোথাও সরে যেতে মাইকিং করে সতর্কমূলক প্রচারণা চালায়। তারা সাময়িক সরে গেলেও পরে আবার এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কক্সবাজার সদরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা কমপক্ষে দুই হাজারের বেশি। পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারীরা যখন পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করে তখন প্রশাসন ও বন বিভাগ বাধা দেয় না। ফলে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা বেড়ে গেছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ৩ হাজার ৫২৫টি পরিবার অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। তন্মধ্যে কক্সবাজার শহরে রয়েছে ৯৪৫টি পরিবার। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তারা পুনরায় ফিরে এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।

কক্সবাজারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে অতি ঝুঁকিতে বসবাস করা পরিবারগুলোকে সরিয়ে আনাটা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তারপরও ঝুঁকি এড়াতে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে গত ৬ জুন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রধান করে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। চলমান এই টানা বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে ঝুঁকিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে জায়গা খোঁজার কাজ চলছে। যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তাই একটু সময়ের দরকার। জায়গা পেলে তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।’ উল্লেখ্য প্রায় আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটারের কক্সবাজার জেলার একটি বড় অংশজুড়েই রয়েছে ছোট বড় কয়েকশ পাহাড়। আর সরকারি এসব জমি বেদখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তার মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close