আশরাফুল ইসলাম, শ্রীপুর (গাজীপুর)
বাঁশের বাজারে হাজার বেকারের কর্মসংস্থান
গাজীপুরের শ্রীপুরের বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট বসে। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাঁশ কিনতে যান। প্রতি মাসে এ হাট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয়।
জানা গেছে, গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ আবাদের তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একবার বাঁশের চারা লাগালে চার থেকে পাঁচ বছর পর তা থেকে বাঁশ কাটা যায়। প্রতিটি মাঝারি ঝাড় থেকে বছরে ৫০ থেকে ৭০টি বাঁশ পাওয়া যায়।
শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে প্রায় ১০ বিঘা জায়গায় বসে হাট। সরেজমিনে দেখা যায়, হাটবার ছাড়াও প্রতিদিনই চলে বাঁশ কেনাবেচা। কেউ বাঁশ কিনতে ব্যস্ত, কেউ বাঁশ ট্রলারে সাজাতে ব্যস্ত, কেউবা বাঁশের আঁটি বেঁধে নদীতে ভাসাতে কাজ করছে। প্রতিদিন ভোর থেকে উপজেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ নিয়ে হাটে যান। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ইশ্বরদী, শান্তাহারসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা বাঁশ কিনতে যান। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সেই বাঁশ নদী পথে নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ব্যাপারী সড়ক পথেও বাঁশ আনা নেওয়া করেন। এছাড়া বাঁশ পরিবহনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হলো নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ঘর তৈরি, পানের বরজ, সবজি চাষের মাচা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বাঁশের তৈরি নানা ধরনের আসবাব থেকে শুরু করে আধুনিক ডেকরেটরদের বিভিন্ন কাজে বাঁশের ব্যবহার এসব অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় ব্যাপারীরা এখান থেকে বাঁশ কিনে নিজেদের হাটে বিক্রি করে থাকেন। এখানে বাঁশের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় সকল ক্রেতারা খুশি। গোসিংগা গ্রামের এই বাঁশের হাটটি এলাকার বেকারদের জন্য করে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার দিনমজুর এখানে কাজ করে। কেউ করে বাঁশ ট্রলারে উঠানোর কাজ, কেউবা করে বাঁশের স্তূপ সাজানোর কাজ, আবার কেউবা করে দূর-দুরান্ত থেকে আসা বাঁশ পরিবহন থেকে নামানোর কাজ।
স্থানীয় পাইকাড়া গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই বাঁশের ব্যবসা করে আসছি। অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট। আকার ভেদে প্রতিটি বাঁশ দেড়শ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বেচাকেনা হয়। প্রতি মাসে এখানে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার বাঁশ বিক্রি হয়।
নরসিংদী পাইকার আশরাফ আলী বলেন, গোসিংগা হাট থেকে প্রতি বুধবার ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বাঁশ ক্রয় করি। নরসিংদী আামাদের নিজের আড়ত রয়েছে সেখানে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে কমপক্ষে ২৫ লক্ষাধিক টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয় এ হাটে। মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয় বলেও জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী খোরশেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এখান থেকে বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকি; এতে আমাদের ভালোই লাভ হয়।
"