লালমনিরহাট প্রতিনিধি
‘বৈশাখী মেলা নাই, হামরা এলা কী করি খাই’
লালমনিরহাটে মৃৎশিল্পীদের আকুতি
‘লালমনিরহাটে বৈশাখী মেলা নাই। করোনায় বসি বসি চলছে হামার দিন। হামরা এলা কি করি খাই! সংসার চলার মতো কোনো পথও নাই। সরকার থেকি কোনো সহযোগিতাও পাই না হামরা। এমন করি বসি থাকলে আয়-রোজগার না হইলে, কেমন করি পরিবার নিয়া বাঁচমো হামরা। হামরা খুব কষ্টে আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কাকিনার মৃৎশিল্পী ফনিমল পাল। এভাবেই কাকিনার ৫০টি মৃৎশিল্পী পাল পরিবার করোনার প্রভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। একই চিত্র পুরো জেলার মৃৎশিল্পীদের মাঝে বিরাজ করছে।
মৃৎশিল্পী সম্প্রদায়ের লোকজন বেঁচে থাকেন বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। পহেলা বৈশাখের দিন থেকে বৈশাখজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো জেলার কিছু স্থানে বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি তাদের জন্য বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। করোনার গত বছরের মতো এবারেও বন্ধ রয়েছে বৈশাখী উৎসব। আগে থেকে বায়না করে রাখা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শেষ মুহূর্তে ফরমাশ বাতিল করেছেন।
সরেজমিনে কুমারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাটির তৈরি সামগ্রী পোড়ানোর চুলা বন্ধ। মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে দিনে কয়েকশ টাকা রোজগার করে যারা সংসার চালাত, তারা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির আগেও যারা সামান্য রোজগার করে সংসার চালাত আজ তাও বন্ধ। রোজগারের অন্য কোনো উপায় না থাকায় বাড়িতে বসে কিছু কিছু পণ্য তৈরি করে বিক্রি করলেও তা সংসারের খরচ চালানোর কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া হাট-বাজারে লোক সমাগম না থাকায় বাজারেও নেওয়া যাচ্ছে না তৈরি করা মাটির পণ্যগুলো। তাই করোনায় এমন কঠিন সময়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন কাকিনার মৃৎশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী কোনা পাল বলেন, ‘একদিকে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে আমাদের তৈরি পণ্যগুলো চলে না। এখন আবার করোনার কারণে একেবারেই আমাদের কাম কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জিনিসপত্র বাড়িতে তৈরি করে রাখা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না বা কোথাও নিয়ে যেতে পারছি না। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি।’
মিনতি রানী পাল বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কী খাব আর ছেলে-মেয়েদের কী খাওয়াব তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। এমনভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আমরা সামান্য রোজগার দিয়ে জীবন চালাই, এখন তাও বন্ধ।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘করোনাভাইরাসেই সবকিছু বদলে দিয়েছে। বৈশাখ আসলেই জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা হয় আর সেই মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে ভালো একটা উপার্জন করে। কিন্তু এবার সবকিছু থেকে বঞ্চিত তারা। তবে সরকারি বরাদ্দের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করা হবে।’
"