প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ
বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, জ্বর-সর্দিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ
কয়েকদিন ধরে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। সূর্যের দেখা মিললেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডা। শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ। ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। অতিরিক্ত কুয়াশায় কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্বল্পআয়ের দিনমজুর ও কৃষক। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা ভুগছে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) : মাঝেমধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ। অতিরিক্ত কুয়াশায় কাজে যেতে পারছে না স্বল্পআয়ের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ভুগছেন ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় কৃষক মাঠে কাজ করতে পারছেন না। ভ্যান চালকরা নাস্তানাবুদ। দিনের বেলায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।
লেবুতলা গ্রামের কৃষক সুব্রত দাস ও পাকুরতিয়া গ্রামের কৃষক মোতালেব শেখ বলেন, কয়েকদিন ধরে যে শীত পড়েছে তাতে বাঁচাই দায়। ঘন কুয়াশায় মাঠে কাজ করতে পারছি না। কাজ না করতে পারলে তো না খেয়ে মরতে হবে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, জ্বর-সর্দিসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ। গত কয়েকদিনে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে আলু, টমেটো, পেঁয়াজসহ শাকসবজিতে পচন ধরার আশঙ্কা থাকে। এতে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ভালোমতো জমি দেখাশোনা ও পচন দেখা দিলে ছত্রাকনাশক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হিলি : দিনাজপুরের হিলি দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে জনজীবন। মাঘের শুরুতে এমন আবহাওয়ার সঙ্গে অবশ্য হিলিবাসীর প্রতি বছরই পরিচয় ঘটে। সইতে হয় কঠিন শীত। কষ্ট করতে হয় সাধারণ গরিব অসহায় মানুষজনকে। তারা তাকিয়ে থাকেন প্রভাবশালী বিত্তবানদের দিকে। তারা এগিয়ে এলে একটা গতি হয় শীত নিবারণের। এবার শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। সন্ধ্যা নামতেই শহর হয়ে পড়ে স্থবির। দুপুরের পর একটু সূর্যের দেখা মিললেও অন্য সময় ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা। এ কারণে বেশিরভাগ সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার যানবাহন।
প্রচন্ড শীতে সচ্ছলরা বাড়ির বাইরে আসছে কম। তবে খেটে খাওয়া মানুষজন জীবিকার সন্ধানে বের হচ্ছেন। শরীরে একটু গরম কাপড় মুড়িয়ে পায়ে হেঁটে কেউবা ভ্যানে চেপে চলছেন কাজের সন্ধানে। শীতের কাঁপুনি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে দিনমজুরদের।
হিলি বাজারে কাজে আসা মধ্যবয়সি খলিল মিয়া জানান, কনকনে ঠান্ডার কারণে নিয়মিত কাজে যেতে পারছি না। বাড়িতে চার সদস্য রয়েছে। তাদের মুখে অন্ন তুলতে কাজে যেতেই হয়। তার ওপর রয়েছে সাপ্তাহিক কিস্তি। সব মিলিয়ে খুব বিপদ।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলম জানান, গোটা উপজেলায় শীতার্ত মানুষের সহায়তার জন্য ৩ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদামতো শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্য তালিকা জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ মিললে আরো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
আদমদীঘি (বগুড়া) : উত্তরে বাড়ছে কনকন শীত। সঙ্গে সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের রোগবালাই। শীতবস্ত্রের দোকানে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ভিড়। কষ্টে দিন কাটছে ছিন্নমূল মানুষের। গত কয়েকদিন ধরে কনকনে শীতে কাঁপছে পশ্চিম বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। শীত নিবারণের জন্য নিম্নআয়ের মানুষ ভিড় করছে পুরাতন কাপড়ের দোকানে। সান্তাহার রেলস্টেশনে কথা হয় এক ছিন্নমূল সত্তরোর্ধ্ব আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে। তার রাত কাটে সান্তাহার স্টেশনের প্ল্যাটফরমে। খুবই কষ্টে কাটছে তার দিন। তিনি বলেন, ‘গেলবার এক সাহেব একখানা কম্বল মোক দিছিল। শীত চলি যাওনের পর থওনের জাইগা পাইনি। পরে হেইডা বেইচ্যা একখান লুঙ্গি কিনছিনু। এবার এহনও কোনো সাহেব আহেনি।’ এবার প্রচন্ড শীতে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
এবার বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, কোল্ড ইনজুরিজনিত কারণে আলুখেত এবং ইরি-বোরো ধানে কিছু সমস্যা হতে পারে।
"