লিটন খান, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়ন

কারাগারের চারপাশে ইটভাটা

কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এর চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে ১০ থেকে ১৫ ইটভাটা। যার অর্ধেকই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাইদের। বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও বন্ধ হয়নি ভাটাগুলোর কার্যক্রম। ভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রতিদিনই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কারা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য, হাজার হাজার বন্দি ও তাদের দেখতে আসা স্বজন। ইদানীং প্রশাসনের নজর এড়াতে ভাটা চালাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন মালিকরা।

পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল চালাচ্ছে এসব ইটভাটা। সেখানে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও টায়ার। ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির। আগে এ সব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফসল হলেও ইটভাটার প্রভাবে উৎপাদন কমে গেছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। স্টাফ আছে প্রায় এক হাজার। রয়েছে তাদের পরিবার-পরিজন। এছাড়া প্রতিদিন হাজতিদের দেখতে আসে তাদের হাজার হাজার স্বজন। ইটভাটার কালো ধোয়ায় বিপন্ন হচ্ছে জেলখানার পরিবেশ। ভাটার কারণে প্রতিদিন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে তারা। গত দুই বছরে কারা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরকে এসব ইটভাটা বন্ধে ১২ বার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে রয়েছে, রাফিয়া ব্রিকস, জেপিএল ব্রিকস, নাজির ব্রিকস, জিকজাক ব্রিকস, ইমরান ব্রিকস, ব্যাপারী ব্রিকসসহ বেশকিছু ইটভাটা। এগুলোর কোনো কোনোটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, আবার কোনোটিতে টায়ার পোড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে ভাটা চালাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন ভাটা মালিকরা। দূর থেকে যেন এসব ব্রিকস বন্ধ বোঝা যায়, তা বোঝাতে তারা চিমনি দিয়ে ধোয়া বের না করে মোটরচালিত ফ্যানের মাধ্যমে ধোয়া আশপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে ইটভাটাগুলো দূর থেকে দেখে বন্ধ মনে হলেও মূলত সেগুলো চালুই থাকে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, কারাগারের আশপাশের ইটভাটার মধ্যে তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লাটমিয়া ও তার ভাইদেরই রয়েছে বেশ কয়েকটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের উচ্ছেদ অভিযান এলে তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে কর্মকর্তাদের প্রতিবারই ম্যানেজ করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনও লোক দেখানো উচ্ছেদ করে চলে যান। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনও তাদের কিছু বলে না। এছাড়া স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরও রয়েছে কয়েকটি ইটভাটা। একাধিকবার ভেঙে ফেলার পরও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে চলছে এসব ভাটা। তারা আরো জানান, ইটভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়ায় পুরো এলাকাবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকলেও ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।

আইন মোতাবেক আবাসিক এলাকা, সংরক্ষিত এলাকা, সরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যায় না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হলেও এখানে এতগুলো ইটভাটা বার বার চিঠি দেওয়ার পরও কেন বন্ধ হচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লাটমিয়ার নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহবুবুর ইসলাম বলেন, কারাগারের আশপাশের ইটভাটার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বার বার অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তারা বলছেন, বন্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। এখানে গাছপালা ফসল ফলছে না। ইটভাটার কারণে আমাদের বাচ্চাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জের ইউএনও অমিত দেবনাথ বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। গত এক বছরে ইটভাটার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জে যতগুলো অভিযান হয়েছে, এত কম সময়ে এত অভিযান আগে কখোনোই হয়নি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এবার আমরা আরো কঠোর হব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close