প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে খুশি গৃহহীনরা

আজ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪৯২ উপজেলায় একযোগে এসব ঘর উদ্বোধন করবেন

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ও গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে একযোগে আজ শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহহীনদের মাঝে এসব বাড়ি বুঝে দেবেন। প্রতিটি গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। গতকাল প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

দিনাজপুর : ‘সারা জীবন কাঁচা মাটি আগুনে পুড়ে হাঁড়ি-পাতিল বানিয়েছি, কিন্তু স্বপ্নেও ভাবি নাই-কাঁচা মাটি পুড়ে ইটের তৈরি পাকা বাড়িতে থাকতে পারব। দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর আর সহায়-সম্বলও নেই। সেই জন্য চিন্তা করা তো দূরের কথা এই বুড়ো বয়সে এসে পাকা বাড়িতে ঘুমাতে পারব, সেটা স্বপ্নেও ভাবি নাই। কিন্তু সরকার এখন আমাদের পাকা বাড়ি করে দিচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে জীবনটা স্বার্থক।’ চোখে-মুখে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস নিয়ে এমনই কথা জানাচ্ছিলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার শ্রীকুষ্ণপুর গ্রামের ৬৭ বছর বয়স্ক অভাবী মৃৎশিল্পী রম্বিকা চন্দ্র পাল। উপজেলার বিজোড়া গ্রামে জয়বাংলা পল্লীতে তিনি পেয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দিনাজপুরে পাকা বাড়ি পাচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ৭৬৬ গৃহহীন পরিবার। গৃহহীনদের জন্য এসব পাকা বাড়ি নির্মিত পল্লীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা পল্লী’। বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব জানান, সরকার এসব বাড়ি নির্মাণ করে দিলেও নিজের বাড়ির কাজ যাতে নিজেই ভালোভাবে বুঝে নিতে পারেন-সেজন্য আগেই মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে গৃহহীন পরিবারগুলোকে। জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, এ জেলায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৭৬৬টি বাড়ি। এসব পাকা বাড়ি নির্মিত গ্রামগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা ভিলেজ’। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে।

শেরপুর (বগুড়া) : শেরপুরে আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে শেরপুর উপজেলায় প্রায় তিন কোটি টাকার এই কাজের দেখভাল করছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে সুঘাট ও শাহবন্দেগী ইউনিয়ন ব্যতীত বাকি ৮টি ইউনিয়নে এই দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামছুন্নাহার শিউলী জানান, প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দুই একটি জায়গায় নি¤œমানের কাজের অভিযোগ পেলেও সেগুলো ঠিক করা হয়েছে।

ইউএনও মো. লিয়াকত আলী সেখ জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে শেরপুর উপজেলায় ১৬৩টি গৃহ নির্মাণ করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : শিবালয়ে ২০টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। উপজেলার উথলী ইউনিয়নের নদীশুকা এলাকায় খাস জমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই শতাংশ জমির মধ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমন্বয়ে একটি পাকা ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ। সঙ্গে রান্নার ঘর, টয়লেট ও গভীর নলকূপসহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব রায় জানান, নির্মাণ কাঠামোর গুণগতমান ঠিক রেখে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ইউএনও বি এম রুহুল আমীন রিমন জানান, এরই মধ্যে সুবিধাভোগীদের মাঝে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। উপজেলায় ‘ক’-শ্রেণিভুক্ত ৩৪১ জনের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২১ জনকে প্রাথমিকভাবে এ ঘর প্রদান করা হয়েছে।

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলী উপজেলার ৫২ গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করা হয়েছে। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত তামান্নার কঠোর তদারকিতে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

আমতলী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এসব পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর নামে কবুলিয়াত দলিল এবং নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হচ্ছে মর্মে নিশ্চিত করেন ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন, মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের মাধ্যমে শেখ হাসিনার করা অঙ্গীকার আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী, এটি তার আরেকটি বড় উদাহরণ। বরগুনা সদর আমতলী ও তালতলীতে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না পর্যায় ক্রমে সবার জন্য গৃহ নির্মাণ করা হবে।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের বকশীগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসেবে খাস জমিতে নির্মাণ করা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন ১৪২ পরিবার। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মুন মুন জাহান লিজা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় প্রতিনিয়ত কাজের মান তদারকি করেন ইউএনও নিজেই।

ইউএনও মুন মুন জাহান লিজা জানান, ১৪২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে যাছাই বাছাই করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় এসব ভূমিহীনদের জন্য খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়।

মোংলা (বাগেরহাট) : মোংলা উপজেলার ৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে ২ শতক জমি এবং একটি ঘর। আজ শনিবার গৃহহীনদের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে। ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘর বরাদ্দে কোনো ধরনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না নিতে পারে সেজন্য সঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন ঘরের কাজের মান শতভাগ ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। আজ সারাদেশে একযোগে এই ঘরগুলোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে ঘরের মালিকদের দলিলও সুসম্পন্ন করা হয়েছে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভূমিহীন ও গৃহহীন এমন ৪৩০টি অসহায় পরিবার পাচ্ছে মুজিববর্ষের উপহার মাথা গোঁজার ঠাঁই পাকা ঘর। সঙ্গে পাচ্ছেন ২ শতাংশের একখন্ড জমিও। উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নে ১৭০টি এবং দেবগ্রাম ইউনিয়নে ১০০টি, উজানচর ইউনিয়নে ৮৭টি এবং ছোটভাকলা ইউনিয়নে ৭৩টি পরিবার পাচ্ছে এ ঘর। গৃহ নির্মাণকাজ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৬ (উপসচিব) শামীম হোসেন, জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম জানান, দ্রুত প্রত্যেকটি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে আরো ৭১৩টি পরিবারের ঘরের জন্য মন্ত্রণালয়ে আরেকটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে নদীভাঙনের শিকার এ উপজেলায় ঘরের প্রয়োজন কমপক্ষে ৩ হাজার।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ৯নং ইউনিয়নে জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছে ১৮ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। ঘরগুলো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪৯২ উপজেলায় যুক্ত হয়ে গৃহহীন-ভূমিহীনদের মুজিববর্ষের এ উপহার তুলে দেবেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এই সেমিপাকা ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরগুলো নির্মাণ কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন ইউএনও মো. আহসান হাবীব জিতু ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম শাওন ভূঁইয়া।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পাঁচটি ইউনিয়নের ভূমি ও গৃহহীন ৮৫টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়ে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে যুক্ত হবেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. এম এ শহীদ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রহিমপুর, পতনউষার, মুন্সীবাজার, আলীনগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে ভূমি ও গৃহহীন ৮৫টি পরিবারের জন্য ৮৫টি ঘর নির্মিত হয়েছে। ৮৫টি ঘরে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ৬০টি ঘরের নির্মাণকাজও সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ঘরগুলো নির্ধারিত ভূমি ও গৃহীনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইউএনও আশেকুল হক বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৮৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মিত হয়েছে। ৬০ ঘর নির্মাণ সম্মপন্ন হয়েছে। এ ঘরগুরো ৬০ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাকি ২৫টি ঘর নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close