আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার
খেলার মাঠে ইট-বালুর স্তূপ
পেকুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বন্ধ হয়ে গেছে অনুশীলন
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় সড়ক সংস্কারে নামে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সরকারি ভবন ও খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ভবন ও মাঠ দখল করে নির্মাণসামগ্রী রেখে খেলার মাঠের ক্ষতি সাধন করলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন নীরব রয়েছে। প্রশাসনের নীরবতায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের খেলাধুলার জন্য একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ স্থান পেকুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স। উপজেলার সদরের সিকদারপাড়ায় পাঁচ একর জায়গায় নির্মিত পেকুয়া উপজেলা শহীদ জিয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সারা বছর ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। ইনডোরে রয়েছে বাস্কেটবল ও ব্যাটমিন্টন কোর্ট। খেলোয়াড়দের শরীর চর্চার জন্য রয়েছে নানাবিধ সরঞ্জাম। যা পেকুয়ার খেলোয়াড়দের শরীর চর্চা ও অনুশীলনের উপযুক্ত স্থান।
স্থানীয় ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, সারা বছর যেখানে খেলাধুলার একটা পরিবেশ থাকলেও সম্প্রতি তা দখল করেছে মেসার্স মো. জামিল ইকবাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবন ও মাঠে সড়ক সংস্কারের মালামাল মজুদ করার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পেকুয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সব খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত বিভিন্ন ক্রিকেট, ফুটবলসহ ক্রীড়া অ্যাকাডেমির কার্যক্রম। কিছু ক্রীড়া অ্যাকাডেমি তাদের অনুশীলন কার্যক্রম পেকুয়া কলেজের মাঠে স্থানান্তরিত করলেও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের অনুশীলন। আর খেলার মাঠে ইট, কংকর ও বালির স্তূপ করে রেখে মাঠের ব্যাপক ক্ষতি করছে ঠিকাদার। এভাবে সরকারি ভবন ও খেলার মাঠ দখল করে ঠিকাদার কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সবুজ ঘাসের মাঠের ওপর মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইট ও বালুর বিশাল বিশাল স্তূপ। মাঠজুড়ে ইট ভাঙছে শতাধিক শ্রমিক। ফুটবল গ্রাউন্ডের দুই গোলবারের একটি উপড়ে ফেলা হয়েছে। অন্যটি ডুবে আছে ভাঙা ইটের স্তূপে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে বড় বড় ক্রেইনে ইটপাথর ও বালু স্থানান্তর করা হচ্ছে। মাঠে রাখা হয়েছে সড়ক সংস্কার কাজে ব্যবহৃত ২০ থেকে ৩০টি বড়-ছোট ট্রাক। মাঠের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিক বসবাসের শেড। শ্রমিকরা ব্যবহার করছে জিমনেশিয়ামের নানা উপকরণ।
সামাজিক সংগঠন আমরা পেকুয়াবাসীর মহাসচিব আবদুল হামিদ জানান, অবিলম্বে ঠিকাদারের কবল থেকে ভবন ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করতে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
পেকুয়া উপজেলা ফুটবল অ্যাকাডেমির সভাপতি আহমদ শফি বলেন, মাঠটি বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেছে। যা খেলোয়াড় উঠে আসার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পাশাপাশি নিয়মিত খেলার মধ্যে যেসব খেলোয়াড় রয়েছে তাদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটা বড় বাধা।
ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সদস্য মোস্তাকিম বলেন, ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠ ইট-বালুতে ঢাকা পড়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার খেলোয়াড়দের ক্রিকেট খেলা চালিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের অনুমতি নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি। ইউএনও মোতাছেম বিল্লাহ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিল। কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
"