আল-আমিন মিয়া,পলাশ (নরসিংদী)

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সুঁই-সুতায় দারিদ্র্য জয় আট শতাধিক নারীর

নরসিংদীর পলাশে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে দারিদ্রকে জয় করেছে স্কুল, কলেজের ছাত্রীসহ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত প্রায় ৮ শতাধিক নারী। তারা এখন স্বাবলম্বী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফ্রি সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন এসব নারী। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারছে তারা। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা নিজেদের লেখাপড়ার খরচ এখন নিজেরাই চালাতে পারছে। এর ফলে পরিবারের কেউ এখন তাদের বোঝা মনে করেন না। বরং তারাই এখন সংসারের হাল ধরেছে। এছাড়া অনেক গৃহবধূ, স্বামী পরিত্যক্ত নারীরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সংসারের অভাব-অনটন দূর করে হয়েছে স্বাবলম্বী।

অভাব-অনটনের সংসারে দারিদ্র্যতাকে জয় করা এক যোদ্ধা (বিধবা) নাছিমা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দু’চোখে কিছুই দেখছিলাম না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও ভরণ-পোষণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে ওঠে ছিলাম। ঠিক তখনই জানতে পারি, সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা। পরে সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জন করার যাত্রা শুরু হয়। এছাড়া ভালো প্রশিক্ষনার্থী হওয়ায় সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি ফ্রি সেলাই মেশিন পাই। আল্লার রহমতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন অনেক ভালো আছি। দূর করেছি সংসারের অভাব।

প্রশিক্ষণ নেওয়া রহিমা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, তার স্বামী যে আয় করত, তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন ছিল। তার মধ্যে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতে গিয়ে তারা নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছিল। এ অবস্থায় প্রতিবেশী সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে জানতে পারেন সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের খবর। পরে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি নিজেই সেলাই কাজ করে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করছেন। তারা এখন স্বাবলম্বী।

গত ৮ বছরে সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পলাশ উপজেলার প্রায় ৮ শতাধিক নারী খুঁজে পেয়েছে তাদের কাঙ্খিত পথ।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১৫ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ন থেকে সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণের যাত্রা শুরু করেন। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মুজাহিদ হোসেন তুষার। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার গড়পাড়া গ্রামে ১০ম শাখার উদ্বোধন করা হয়। জানতে চাইলে তুষার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি আর আমার মা নিগার সুলতানাকে নিয়ে অসচ্ছল, শিক্ষিত-বেকার ছাত্রী, হতদরিদ্র মহিলা ও বিধবাদের কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায় এই চিন্তা থেকে আমরা ফ্রি সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অলস হাতকে কর্মের হাত হিসেবে গড়ে তুলি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ শতাধিক নারীর হাতকে আমরা কর্মের হাতে পরিণত করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close