শাহ আলম, খুলনা

  ০৬ আগস্ট, ২০২০

খুলনায় এবারও দাম নেই কাঁচা চামড়ার

বিপাকে মাদ্রাসা-এতিমখানা

গেল বছরের মত এবারও খুলনার বাজারে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া ‘সস্তা’ মূল্যে বিক্রি হয়েছে। আর দাম না পেয়ে এ অঞ্চলের মাদরাসা ও ইয়াতিমখানা কর্তৃপক্ষ চরম হতাশ হয়েছেন।

ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে খুলনার বাজারে বড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। আর ছোট চামড়ার মূল্য ছিল মাত্র ১৫০ টাকা। অপরদিকে, ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস গড়ে ২০ টাকা করে।

কোরবানির চামড়া সংগ্রহকারী নগরীর বিভিন্ন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ হতাশার সুরে বলেন, মাদরাসা ও ইয়াতিমখানাগুলোর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস কোরবানির চামড়া। এ চামড়া বিক্রয়লব্ধ আয় দিয়ে বছরের বড় একটি সময়ে ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের মত এবারও চামড়ার মূল্য সর্বনি¤œ হওয়ায় সংকট দেখা দেবে।

নগরীর জিরোপয়েন্ট মাদানী নগর মাদরাসা ও ইয়াতিম খানার মোহতামিম মাওলানা মো. কামাল হোসেন। তিনি জানান, ৫৬টি চামড়া সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তারা। কিন্তু বড় চামড়া গড়ে ২৫০ টাকা এবং ছোট চামড়া ১৫০ টাকা পিস বিক্রি করতে হয়েছে। যাতে চামড়া সংগ্রহের খরচও মেটানো কষ্টকর। তিনি বলেন, করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে কওমি মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকরা কোরবানির ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু চামড়ার দামে চরম ধস নামায় মাদরাসা পরিচালনায় সংকট তৈরি হবে।

নগরীর শহীদ শেখ আবু নাসের দাখিল মাদরাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষক খান জাহান। তিনি জানান, তার মাদরাসার এতিমখানার জন্য গরুর চামড়া ১৫৯টি ও ছাগলের ৫৭টি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। যা ফুলতলার সুপার লেদারে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক মাদরাসা ও এতিমখানা কোরবানির পশুর চামড়ার উপর নির্ভর করে। অনেকে তাদের পশুর চামড়া বিনামূল্যে মাদরাসা এবং এতিমখানায় দান করে। কিন্তু চামড়ার দাম নি¤œগামী হওয়ায় মাদরাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রূপসার একটি মাদরাসার শিক্ষক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, কোরবানির চামড়ার দাম খুবই কম। চামড়া সংগ্রহ করতে যা ব্যয় হচ্ছে, বিক্রি করে তাও উঠছে না। চামড়া ব্যবসায়ীরা নামমাত্র মূল্য দিয়ে গরিবের হক নিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে খুলনার শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে কোনবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে আসা অনেকে অভিযোগ করেন, দাম নির্ধারণ ও রফতানির ঘোষণা দেওয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয় ঠেকানো গেল না।

শেখপাড়া চামড়া পট্টির আমান লেদার কমপ্লেক্সের মালিক আমানুল্লাহ আমান বলেন, ট্যানারিতে গত বছরের চামড়া এখনও মজুদ রয়েছে। তাই ট্যানারিতে চামড়া নেওয়ার আগ্রহ কম। এর সঙ্গে আছে করোনার প্রভাব। তিনি জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে আগের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় আমরা নিজেরাই রয়েছি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার বাজার গত বছরের চেয়েও অনেক খারাপ।

ইয়াসিন লেদারের অপর ব্যবসায়ী মো. আবু জাফর জানান, এবার ১৮-২০ বর্গফুটের চামড়া ১০০ টাকা ও ৩০-৩২ বর্গ ফুটের চামড়ার দাম ৫০০ টাকা । গত বছর এই চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দাম ছিল। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা বিগত বছরের টাকাই এখনও পরিশোধ করেনি। যে কারণে ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে নগরীর শেখপাড়া চামড়া পট্টি ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে দোকানের সামনেই রাস্তার ওপর তাতে লবণ মাখিয়ে স্তপ করে রেথেছেন।

চামড়া থেকে নিঃসৃত রক্ত সড়কে গড়িয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশও দূষণ হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধিও নেই। কিন্তু এ বিষয়ে কোন কর্তৃপক্ষের নজর নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close