নওগাঁ সদর উপজেলায় কালভার্টের মুখ বন্ধ করে চালকল তৈরি করায় ব্যাহত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। এ ছাড়া চালকলের দূষিত পানি সরাসরি আবাদি জমিতে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

উপজেলাা নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের সাহাপুর নামক স্থানে কালভার্টের মুখে এই চাল তৈরি করেছেন আলহাজ বেলাল হোসেন।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে সাহাপুর নামক স্থানে ‘বেলকন চাল কল’ তৈরি করা হয়। এর পাশেই কালভার্ট। কালভার্টের মুখ ঘেঁষে কলের স্থাপনা তৈরি করায় এলাকাবাসীর কোন কাজে আসে না। এতে করে রাস্তার উত্তর পাশের ধামকুড়ি, সাহাপুর ও বশিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পানি ওই কালভার্ট দিয়ে যেতে পারে না। সেই সঙ্গে চালকল থেকে নিঃসৃত দূষিত কালো পানি তার আশপাশে ফসলের জমিতে পড়ছে। এছাড়া সরাসরি কালভার্ট দিয়ে রাস্তার দক্ষিণপাশে দোগাছী গ্রামের মাঠের ব্যক্তিগত ফসলে গিয়ে পড়ে। এতে করে প্রায় শতাধিক কৃষকের ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঠিকমতো ফসল হয় না এবং পোকামাকড়ের আক্রমন দেখা দেয়। চাউলকলের দুষিত পানিতে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা বিষয়টি বার বার চাউল কল মালিককে বলার পরও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।

দোগাছী গ্রামের ওয়ার্কসপ মিস্ত্রী মুসা বলেন, আগে তারা গাড়ি দিয়ে দুষিত পানি ফেলে দিতো। কিন্তু সেটা কয়েক বছর থেকে আর দেখা যায় না। এখন চাল কলের দুষিত পানি কালভার্টের ভিতর দিয়ে নালা দিয়ে সরাসরি ফসলের ক্ষেতের মধ্যদিয়ে চলে যায়। যেসব পানি যাচ্ছে তা ব্যক্তিগত জমির ফসলের উপর দিয়ে যায়। ফলে মাঠের ফসল পোকা ধরে নষ্ট হয়। নির্ধারিত কোন নালা নাই। শুধু চাল কলের পানি এ কালভার্ট দিয়ে যায়।

দোগাছী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ দুলাল হোসেন ও সাহাপুর গ্রামের মুঞ্জুর রহমান বাবু বলেন, আগে কয়েকটি গ্রামের পানি এ কালভার্ট দিয়ে যেতে। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে কালভার্টটি প্রায় দখলে নিয়েছেন বেলকন গ্রুপ। দূষিত পানি ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সিমেন্ট ব্যবসায়ী মেহেরুল হাসান সাবু বলেন, আমাদের জমিটা ওয়ার্কফু স্টেটের। যার কারণে বেলকন গ্রুপের মালিক একটু বেশি সুবিধা নিতে চান। চাউল কলের দুষিত ও গরম পানি তাদের হাউজে ফেলার পরে সেখান থেকে ওভার ফ্লো হয়ে আমার জমিতে পড়ে। এ কারণে আমার ৪৬ শতাংশ জমির পুরোটাই ফসল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। এছাড়া একটু দুরে ২৫ শতাংশ জমির অর্ধেক পরিমান ফসল পাই। আমি অনেক বার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু তারা ক্ষমতাবান হওয়ায় কোন কর্নপাত করেননি। আমাদের দাবি দুষিত পানি বন্ধন হোক।

জানতে চাইলে বেলকন গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলাল হোসেন বলেন, ১৯৮৪ সালে চাউল কলটি স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে শুধু আমার চাউল কলের পানি না, অন্যান্য চাউল কলের পানিও যায়। আমার জানামতে আমি কারো উপকার ছাড়া ক্ষতি করি নাই।

সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, দুষিত পানি ফসলি জমিতে পড়লে ফসল নষ্ট হয়। তবে ওই চাউল কলের দুষিত পানি যে ফসলের মাঠে যায় বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাস্থল দেখার পর যদি কার্লভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় তবে সরকারি বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

"