অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর

  ১৫ আগস্ট, ২০২১

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিহিত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা আগস্ট মাস। এই মাসটি বাঙালি জাতির জন্য শুধু বেদনারই নয়, শোকের ও আবেগেরও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই কোনো না কোনো বেদনাবিধুর ঘটনা ঘটেছে এই মাসে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়, পরের বছরের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একসঙ্গে বোমা হামলা ঘটানো হয়েছিল। শোকের মাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের এই লেখা শুরু করছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা। তিনি বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। তিনি তার চিন্তা, চেতনা, স্বপ্ন ও দর্শনে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতিকে ধারণ করতেন। চলনে-বলনে, কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, পোশাকে-আশাকে, বিচার-বিবেচনায়, আন্দোলন-সংগ্রামে, ভাষা-সংস্কৃতিতে ছিলেন বিশুদ্ধ বাঙালি। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ভিত্তি।

রাজনীতি হচ্ছে আদর্শচর্চার জায়গা। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনীতি আদর্শহীন হয়ে পড়ছে। অনেকেই শুধু ক্ষমতার লোভে বা একটু ভালো থাকার আশায় আদর্শহীনভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য হচ্ছেন। এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় যখন দলটি ক্ষমতায় থাকে। আদর্শহীন মানুষগুলো ক্ষমতায় থাকা দলটির মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। ক্ষমতাসীন দলটির যে আদর্শ বা তার নেতার যে আদর্শ তারা তা ধারণ করেন না। দলে তারা থাকতেই পারেন, তবে নেতৃত্বে আসাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফলে ধারাবাহিকভাবে আদর্শের অনুসারীরা হতাশ হন।

বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ ধারণ করতেন, সেই আদর্শকে নিজের করে প্রত্যেক কর্মীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করতে হবে। তার আদর্শহীন কোনো রাজনৈতিক কর্মী এ দলে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা অনেকেই বলে থাকি যে, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। কিন্তু তা কি আমরা মননে মানি বা জানি? অনেকেই মানেন না বা জানেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এ দেশের সব নাগরিকেরই রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের সব নাগরিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, তাদের এ দেশে না থাকাই ভালো। তারা বরং তাদের পছন্দ অনুযায়ী অন্য যেকোনো দেশে চলে যেতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি যারা করতে চান বা করছেন, তাদের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।

আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন দেখলে দেখতে পাব, তিনি তার জীবদ্দশায় তার আদর্শগুলোকে লিখিত এবং অলিখিতভাবে আমাদের মাঝে দিয়ে গেছেন। জাতির পিতার রেখে যাওয়া আদর্শগুলো আমি তিন ভাগে ভাগ করে আজকের এই লেখায় উপস্থাপন করছি। প্রথমত, জাতির পিতা তার জীবদ্দশায় অলিখিতভাবে যে কাজগুলো করেছেন তার মাধ্যমে আমরা তার অনেকগুলো আদর্শ পাই, দ্বিতীয়ত, লিখিত রূপ অর্থাৎ জাতির পিতার যেসব কাজের লিখিত রূপ রয়েছে, তৃতীয়ত, জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে রেখে যাওয়া আদর্শ।

অলিখিত আদর্শগুলো আমরা জাতির পিতার রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করা এবং বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মুক্তি, নিজস্ব ভূমিসত্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। যা তিনি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করেছেন। তার জীবনে জনগণই ছিল অন্তপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তার মন কাঁদত। জনগণের মুখে হাসি ফোটানো তার অন্যতম একটি আদর্শ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে বাংলার মানুষের উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠাই ছিল তার আদর্শ। বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং বাঙালি জাতি যেন একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থায় বসবাস করতে পারে এটাই ছিল তার সারা জীবনের স্বপ্ন। এই স্বপ্নই হচ্ছে আদর্শের বহিঃপ্রকাশ। তার অন্যতম ছিল বাঙালি জাতির একটি নিজস্ব ভূমিসত্তা, যে ভূমিতে বাঙালি তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে, তার নীতি সে নিজেই পরিচালনা করতে পারবে এবং বাঙালির সংস্কৃতি সে নিজেই পরিচালনা করবে। জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়া, জনগণকে ক্ষমতায়ন করা, ধর্মনিরপেক্ষ থাকা, মানুষের জন্য কাজ করা, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া জাতির পিতার অন্যতম আদর্শ। যে কারণে তিনি জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন বীরের মর্যাদা, বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। দিয়েছেন স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে আমি সমগ্র মানবজাতি নিয়েই ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধুকে তার পিতা শেখ লুৎফর রহমান উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘Sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না’। বঙ্গবন্ধু তার জীবনে কোনো দিনও পিতার তার সেই উপদেশ ভোলেননি। শোষণ, জুলুম, নির্যাতন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সংগ্রাম করে গেছেন এবং সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির ওপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন আর নিপীড়ন চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি সংগঠনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির পিতা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা উপস্থাপন, ৬৮-এর আগরতলা মামলা প্রতিহতকরণ, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এসবই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণে শান্তির ডাক দিয়েছেন। যার মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যখন হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করে; ঠিক তখনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরই পাক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তার প্রকাশ ঘটে। যার সর্বাধিনায়ক আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এগুলো যখন জাতির পিতা অর্জন করলেন, তখন তিনি লিখিতভাবে আমাদের একটি আদর্শ দিলেন। যা ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সুদৃঢ় জাতীয়তাবাদ আর সামাজিক সমতা এই চার মূলনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যা বাস্তবায়িত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সুদৃঢ় সামাজিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতো। যার ফলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হতো। এগুলো আমাদের মানতে হবে এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি রাষ্ট্র দিলেন এবং তার আদর্শ সামনে রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। তাই সংবিধান থেকে এই আদর্শের পরিবর্তন কখনোই করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।

বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেন গুদামে খাদ্য নেই, মাঠে ফসল নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ শূন্য। বস্তুত কোনো ব্যাংকের কার্যকারিতা নেই। সড়ক ও রেলপথ বিচ্ছিন্ন, নৌ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিধ্বস্ত। স্কুল-কলেজগুলো ছিল পরিত্যক্ত সেনাছাউনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে সম্ভাব্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের কিছু কুচক্রী মহল তখনো চাইছে দেশটি স্বাধীন হিসেবে না থাকুক অথবা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হোক। এত কিছুর পরও এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট থেকে ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করেছেন। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের এত উন্নতি দেখে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শত্রু সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত শুরু হয় এবং দেশের ভেতরে একধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন যে, দেশে এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে আমি যে লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই, সেই লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না। তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তখন তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আমাদের মাঝে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। এই দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমেও বঙ্গবন্ধু তার নতুন কতগুলো আদর্শ আমাদের মাঝে দিয়ে গেছেন। এই দ্বিতীয় বিপ্লবে তিনি চেয়েছিলেন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় ঐক্য এবং জনগণকে একটি জনমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা উপহার দেওয়া। জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, জাতির পিতার সেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ফলে আজকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পাকিস্তানের থেকে কম। তার যে খাদ্য উৎপাদনের নীতি, তা আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করছেন। যার ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছিলেন। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্বাধীনতাবিরোধী দুয়েকটি দল ছাড়া বাকি সব দল শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু কন্যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সরকার ব্যবস্থা। যদিও এটি একটি কঠিন কাজ। আমরা ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছি। তার দক্ষ নেতৃত্বে এখন আমরা বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে অনেক পেছনে আছি। বঙ্গবন্ধু যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তখন শুরু না করতেন, তাহলে আজকে আমরা এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী সব সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের জন্য কাজ করার কথা বলছেন। এসবের কারণেই আজকে করোনার মতো মহামারি দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশ শক্ত অর্থনীতির ভিত দেখাতে পেরেছে; যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ভেঙে পড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখনো ৫ শতাংশের ওপরে।

সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করতে চাইবেন, তাদের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শগুলো সামনে রেখেই রাজনীতি করতে হবে। সেটা সে দলের মধ্য থেকে কাজ করুক কিংবা দলের বাইরে থেকে কাজ করুক। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা, তিনি কোনো দলের না, তার আদর্শ যে কেউই ধারণ করতে পারেন। কিন্তু জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত দলে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শগুলো ধারণ বা পালন করেই রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যখন কিছু মানুষ ভয় পেতে শুরু করল এবং তারা যখন বুঝে গেল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জাতির পিতার এই আদর্শ সামনে রেখে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক নেতায় পরিণত হতে যাচ্ছেন, তখনই জাতির পিতা এবং তার আদর্শকে এই বাংলাদেশ থেকে বিলীন করে দেওয়ার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। যেখানে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নারী, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও বৃদ্ধাসহ গোটা পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। যদি সেদিন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে না চাইত, তাহলে গোটা পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো কেন? কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় ছিলেন বলেই আমরা জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ছিলেন, তারা ১৯৭৫-এর পরও জাতির পিতার আদর্শকে জীবিত রেখেছেন এবং সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার সেই আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশকে আমরা একটি উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে সক্ষম হচ্ছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু কোনো দলেরর স্লোগান নয়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। এই স্লোগানটি বাঙালি এবং বাংলাদেশের স্লোগান। বাংলাদেশের সব নাগরিক ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এবং চাকরি নির্বিশেষে সবাই জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলাটাই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির আদর্শ।

আমার আজকের এই লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, আমাদের আজকের যে তরুণ প্রজন্ম যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী বা রাজনীতি করছেন কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান, তারা যেন ক্ষমতা ও সব ধরনের লোভ-লালসায় না পড়েন। জনগণের সেবার মাধ্যমে তারা যেন জাতির পিতার আদর্শকে খুঁজে পান এবং ধারণ করেন। তাদের মাধ্যমেই চিরকাল এই বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহমান থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close