চট্টগ্রাম ব্যুরো
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সভায় তথ্যমন্ত্রী
পেট্রলবোমা সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে হবে
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির পেট্রলবোমা সন্ত্রাসীরা আবার মাঠে নেমেছে। তাদের তাড়িয়ে দিতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপির সমাবেশে আমরা কখনো বাধা দিইনি, দেবও না। কিন্তু নিজেরা যখন মারামারি করে, তখন তো অন্য কারো বাধা দিতে হয় না। যদি পেট্রলবোমা বাহিনীদের দেখি, তখন কিন্তু আমরা বসে থাকব না, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সমগ্র পৃথিবীতে তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ৬০ ডলারের তেল ১৭০ ডলারে গেছে। এখন সেটি ১৩৮/৪০ ডলার। দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে আমরা তেলের দাম দ্বিগুণ করিনি। সবমিলিয়ে ৩৮-৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আমরা বাড়িয়ে পশ্চিম বাংলার সমান করেছি। বিশ্ববাজারে যদি তেলের দাম স্থিতিশীলভাবে কমে, তাহলে আবার তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।’
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদার অডিটোরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সহসভাপতি আবদুল মোনাফ সিকদার।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা একজন রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা, তা নয়। এ দেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। আর সেই হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফজরের আলো ফোটার আগে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সংবাদ জিয়াউর রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, তখন সেই ভোরবেলা সুটেট-বুটেট অবস্থায় থাকা জিয়ার স্বাভাবিক জবাব ছিল, কি হয়েছে তাতে, উপরাষ্ট্রপতি তো আছে! তখন তিনি পোশাক পড়ে তৈরি ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের খবরের অপেক্ষায়।’
তিনি বলেন, কর্নেল ফারুক ও রশিদ ১৯৭৬ সালে লন্ডনে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ড নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে যে তার সংশ্লিষ্টতা, সেই যে অন্যতম কুশীলব ছিল তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমস্ত প্রমাণ করেছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন, তাদের বিদেশে চলে যাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সেবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছে জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রসিডিং সংরক্ষিত আছে, সেই মামলার প্রসিডিংয়ে আসামি এবং সাক্ষীরা তাদের জবানবন্দিতে সবিস্তারে বলেছেন কখন কোথায় কীভাবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিল, তিনি কিভাবে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মেজর জেনারেল সফি উল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করেন খোন্দকার মোস্তাক।’ খোন্দকার মোস্তাকের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর না হলে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অন্যতম কুশীলব না হলে জিয়াউর রহমানকে কেন সেনাবাহিনী প্রধান করা হয় প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বন্দুকের নল থেকে নির্গত দল হচ্ছে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি। তিনি বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল, ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে বিএনপি গঠন করেছিল। সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার জন্য মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ, গয়েশ্বর বাবুসহ যারা যোগদান করেছিল তারাই হচ্ছে বিএনপির বড় বড় নেতা। তারা সবাই রাজনীতির কাক।
তিনি বলেন, ‘কদিন আগে বিএনপির নেতৃত্বে সমাবেশ হয়েছিল নয়াপল্টনে। সেখানে এই রাজনীতির কাকেরা যেভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের দলের সাধারন সম্পাদক সম্পর্কে কথা বললেন, সেই ধরণের কথা আমাদের রুচিতে বাধেঁ। কিন্তু আমি যদি বলি তাদের নেতানেত্রীরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে এখনো নামিনি, আগামী মাসে পরিপূর্ণভাবে নামব। রাজপথে নামলে বিএনপি পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। বিএনপিকে অবশ্য সারাদেশে খুঁজে পাওয়া যায় না, বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যায় নয়াপল্টনের অফিস এবং প্রেস ক্লাবের সামনে। বিএনপির সেসব সমাবেশে এখন অনেক নেতাকর্মীদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কীভাবে গর্তে ডুকাতে হয়, সেই ওষুধ আমাদের জানা আছে। প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হবে।’
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিএনপির সময়ে সারা দেশের ৫০০ জায়গায় বোমা ফাটিয়েছিল। আগামী ১৭ আগস্ট সেই বোমা হামলা দিবসের দিন সমগ্র বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির নৈরাজ্য এবং দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সমাবেশ হবে। রাঙ্গুনিয়ায়ও সারা দেশের ন্যায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ জানানোর অনুরোধ জানান তথ্যমন্ত্রী।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি, জহির আহমদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিচ আজগর, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, আকতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, আবু তাহের, এমরুল করিম রাশেদ, শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
"