চবি প্রতিনিধি
লাল হলুদে মাতোয়ারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আকাশে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি, কখনো কড়া রোদ। গরমে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে লাল হলুদ আর বেগুনি রঙের বাহার। যার কাছে হার মানে মেঘমুক্ত আকাশের ঝাঁঝালো সূর্যালোক। তাতানো রোদেও এক ধরনের প্রশান্তি এনে দিয়েছে প্রকৃতির এই অনন্য সাজ। ঘাম ঝরা গ্রীষ্মে আগুনের ফুলকির মতোই কৃষ্ণচূড়া ও সোনালুর লাল হলুদে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রূপসী ক্যাম্পাস। ডালে ডালে আমোদিত ‘নতুন যৌবনের দূত’।
সোনালু ফুলের ঝলমলে রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসল। পুরো গাছ থেকে হলুদ ঝরে ঝরে পড়ছে। মন মাতানো উতল হাওয়ায় কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলতে থাকা সোনালু ফুলের থোকাগুলো নাড়িয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মনও।
আর কৃষ্ণচূড়ার লাল আবির গ্রীষ্মকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। বৈশাখে কৃষ্ণচূড়া তার লাল আবির নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আপন সৌন্দর্যের মহিমা নিয়ে। ঋতুরাজ বসন্তের ভালোবাসা নিয়ে কৃষ্ণচূড়া তার সব রং প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আইন অনুষদের সামনে, শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকা, বঙ্গবন্ধু হল প্রাঙ্গণ, শহীদ আবদুর রব হল, লাইব্রেরি চত্বর, টিচার্স কলোনি, স্টেশন চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় সর্বত্রই ফুটেছে গ্রীষ্মের এই দুই ফুল।
জানা যায়, সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে। সোনালু গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে গাছ থাকে পত্রশূন্য। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখাজুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালি হলুদ রঙের ফুল ফুটে। এর ব্যাপ্তি থাকে পুরো গ্রীষ্মকাল।
অন্যদিকে কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। কৃষ্ণচূড়াগাছের উচ্চতা ১১-১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এর শাখা-পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ে ফাটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। কুড়ি আসার কিছুদিনের মধ্যে পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে।
অর্থনীতি বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী হোসাইন তন্ময় বলেন, কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু ফুলের সমাহার আমাকে মুগ্ধ করে। ক্যাম্পাসে পা দিয়েই কিছুক্ষণ কৃষ্ণচূড়ার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকি। গ্রীষ্মের খরা রোদে যখন এই গাছের ছায়ায় একটু প্রশান্তির খোঁজ করি, তখন এই সোনালি ফুলগুলোর দিকে তাকাতেই মন খুশিতে ভরে উঠে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শতাব্দী রায় মনীষা বলেন, গ্রীষ্মের এ সময়ে ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গা সোনালু আর কৃষ্ণচূড়া ফুলে ছেয়ে যায়। একসঙ্গে অজস্র সোনালু ফুলের সম্ভার ক্যাম্পাসকে এক টুকরো স্বর্গে পরিণত করে। যা স্বচোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। কৃষ্ণচূড়ার লাল আবিরের সৌন্দর্য তো বর্ণনা করার মতো না।
"