আব্দুর রহমান রাসেল, রংপুর

  ২৩ মে, ২০২২

অপেক্ষা ফুরাল, রংপুরে শুরু হচ্ছে হাইটেক পার্কের কাজ

দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষার পর আগামী বৃহস্পতিবার রংপুরের খলিশকুড়ি এলাকায় বহুল প্রতীক্ষিত হাইটেক পার্কের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে লোকনিয়োগ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝে পায়নি অভিযোগ মালিকানাধীন কৃষকদের। হাইটেক পার্ক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রংপুরে কর্মসংস্থান হবে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর। এখানকার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার এই পার্কের কাজ শুরুর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তবে উদ্বোধনের কথা শুনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। অনেকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। আবার অনেকেই ভাবছেন এবারও কেবল সান্ত¡নার বাণী শোনাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের বিষয়ে জানা যায়, এরই মধ্যে লোক নিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪৫ জন। এদের মধ্যে অনেকেই এখন অবস্থান করছেন এই এলাকায়। স্থানীয় যুবক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, শুনেছি এ মাসেই কাজ শুরু হবে। এখানে এরই মধ্যে প্রকল্পের লোকেরা যাতায়াত করছেন। এখনো জমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝে পাননি কৃষকরা। তবে আজই কৃষকদের তালিকা করার জন্য লোক এসেছিল।

খলিশাকুড়ির মুজাহিদ নামের আরেকজন যুবক বলেন, আমাদের এলাকায় হাইটেক পার্ক হবে এটা আনন্দের বিষয়। স্থানীয়রা খুবই খুশি। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষাতেও যখন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি তখনই হতাশ হয়েছি আমরা। প্রকল্পটি হলে এই এলাকার আর্থসামাজিক দৃশ্যপট অনেকটা পরিবর্তিত হবে। মো. রতন সরকার নামের এক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস আগে তার নিয়োগ হয়েছে অফিস সহকারীর হিসেবে। এ ছাড়াও ওয়ার্ক অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে যোগ করা আবু সাইদও বাড়িভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন ফুল আমের তল এলাকায়। দুজনই কাজ উদ্বোধনের কথা স্বীকার করেন। রংপুর নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশাকুড়িতে প্রায় ৯ একর খাস জমি হাইটেক পার্ক বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ দেয় রংপুর জেলা প্রশাসন। এরপর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, মাপজোক ও মাটি পরীক্ষার পর আর কোনো অগ্রগতিই ঘটেনি।

অ্যাপ্রোচ সড়কের জমি অধিগ্রহণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এর কার্যক্রম এত দিন মুখ থুবড়ে পড়ে। পার্কের জমিতে প্রবেশের কোনো পথ না থাকায় গত বছরে ২৬ জুলাই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিরাত মাহমুদা স্বাক্ষরিত রংপুর জেলা প্রশাসকর কাছে পাঠানো পত্রে আরো দুই একর ১৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য রংপুর জেলা প্রশাসককে বলা হয়। খলিশাকুড়ি এলাকায় দেখা যায়, হাইটেক পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা ৮ দশমিক ৫৯ একর জমি পিলার আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মৌসুমের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অধিগ্রহণ করা জমির পাশে সড়কের ওপর টাঙিয়ে রাখা হয়েছে প্রকল্পের তথ্য সংকলিত একটি সাইনবোর্ড। নকশানুযায়ী তিনটি ভবনের মধ্যে একটি হবে স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি সাত তলাবিশিষ্ট মাল্টিটেনেন্ট ভবন। এ ছাড়া দুটি তিন তলাবিশিষ্ট ক্যান্টিন ও অ্যাস্ফিথিয়েটার ভবন (স্টিল স্ট্রাকচার) এবং ডরমিটরি ভবন (আরসিসি) থাকবে।

২০১৯ সালের আগস্টে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে হাইটেক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক হোসনে আরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি ভারত সরকারের সহায়তায় হচ্ছে। আমরা এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে সব কাগজপত্র পাঠাই। সেখান থেকে চলে যায় ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে। এসব প্রসেসের জন্য প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এসেছে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. আবু কালাম ফরিদ উল ইসলাম জানান, হাইটেক পার্ক বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও যুবকরা কাজের সুযোগ পাবে। তথ্যের প্রসার ও আইটি বিভাগ আরো প্রসারিত হবে। বাংলাদেশে সফটওয়্যার শিল্পের আরো বিকাশ ঘটাবে। রাজস্ব আয়ে এ পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, হাইটেক পার্ক করলেই হবে না। এর শতভাগ মনিটরিং দরকার। তাহলেই এখান থেকে জুতসই সুবিধাদি প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকবে। রংপুর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের এডিপি শফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আগামী ২৬ মে রংপুর হাইটেক পার্কের কাজের উদ্বোধনের সত্যতা স্বীকার করেছেন তিনি। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সারা দেশের জেলা পর্যায়ে ১২টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রংপুর হাইটেক পার্কের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ১৫৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close