সিলেট ব্যুরো

  ১৬ মে, ২০২২

সিলেটে অটোরিকশায় ‘স্বর্ণের বার’ নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ

সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতেছে। পিতলের বারকে স্বর্ণের বার বলে প্রতারণা জাল ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার ও মোবাইলফোন। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘ দিন থেকে সিলেটে অটোরিকশা যাত্রীদের এভাবেই নিঃস্ব করে দিচ্ছে।

এর আগে ছিনতাইকারীরা ছদ্মবেশে যাত্রীদের মানিব্যাগ, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করলেও এবার পিতলের বারকে ‘স্বর্ণের বার’ বানিয়ে প্রতারণা শুরু করেছে। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের পাতানো ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পুলিশি ঝামেলায় না পড়তে অনেক ভুক্তভোগী ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীর ভাই জানান, ‘আমার মা ও ভাই গত বুধবার (১১ মে) সিলেট নগরীর বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের সামনে থেকে কদমতলী পয়েন্টে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। কিছুদুর যাওয়ার পর অটোরিকশায় বসা এক যাত্রী বলেন রাস্তায় একটি ব্যাগ পড়ে আছে। পরে অটোরিকশা দাড় করিয়ে ব্যাগটি হাতে নেন ওই যাত্রী। পড়ে অটোরিকশায় থাকায় অপর যাত্রীরা ব্যাগে কী রয়েছে জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কথা হয়। পড়ে একজন ব্যাগটি খুলে দেখেন একটি ২২ ক্যারেটের একটি স্বর্ণের বার। সাথে মেয়ের উদ্দেশ্যে বাবার লেখা একটি চিরকুট রয়েছে। চিরকুটে লেখা রয়েছে- আমি করিম (ছদ্মনাম) সৌদিআরব থেকে তোমার গলার হার এবং কানের দুল বানানোর জন্য এই স্বর্ণের বারটি দিয়েছি। স্বর্ণের বার কী করবে এ নিয়ে অটোরিকশা চালক ও অপর তিনজন যাত্রী শলাপরামর্শ শুরু করে। এক পর্যায়ে একজন যাত্রী বলে এটি নিয়ে বেশি কথা বললে বা মালিককে ফিরিয়ে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হবে। বরং ৫ হাজার টাকা দেব আমার কাছে বিক্রি করে দেন। পরে আরেক যাত্রী বলেন-আমি দশ হাজার দেব আমার কাছে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, ‘এভাবে সকলের দরকষাকষির এক পর্যায়ে আমার ভাই স্বর্ণের বার কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা দাম করেন। পরে ওই যাত্রী বিক্রির জন্য রাজি হয়। আমার ভাইয়ের কাছে নগদ টাকা না থাকায় বিকাশে টাকা আনার জন্য মুঠোফোন বের করলে ওই প্রতারকরা বলে মোবাইলে স্বর্ণের বারের কথা বললে আপনি ফেঁসে যেতে পারেন। অন্য কথা বলে টাকা সংগ্রহ করেন। এক পর্যায়ে টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে নগদ চার হাজার টাকা ও সাথে থাকা মায়ের ১৫ হাজার টাকা দামের কানের দুল দিয়ে স্বর্ণের বার ক্রয় করে। পরে তাদেরকে কদমতলী পয়েন্টে নামিয়ে অপরযাত্রীসহ অটোরিকশা চলে যায়। বাড়িতে এনে দেখা যায় এটি পিতলের একটি টুকরো। তিনি বলেন, প্রতারকরা অভিনব কায়দায় আমার মা ও ভাইকে বোকা বানিয়ে সব হাতিয়ে নিয়ে গেছে। লোক লজ্জার ভয়ে পুলিশি ঝামেলায় না গিয়ে আমরা বিষয়টি গোপন রেখেছি।

এদিকে এ ঘটনা তিনি ফেসবুকে শেয়ার করলে আরও অনেকে এ ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি সিলেটের বিভিন্ন সড়কে এভাবেই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সব খোয়াচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। প্রতারকরা পিতলের বারকে স্বর্ণের বার বলে যাত্রীদের প্রলুব্দ করছে। পরে কৌশলে এটি বিক্রি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইলসহ সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই ঘটনা গোপন রাখলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধারে ছোটাছুটি করছেন।

এ ঘটনা ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের মোবাইল ও টাকাসহ জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধা দিলে ছুরিকাঘাতের শিকার হতে হয় যাত্রীদের। এসব ছিনতাই কাজে সহযোগিতা করছেন চালকরা। সংঘবদ্ধ এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাই করে আসছে। এতে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে অটোরিকশায় চলাচল। অনেকেই পুলিশি ঝামেলার কারণে থানায় অভিযোগ দিতে চান না।

এ ব্যাপারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, এর আগে অটোরিকশায় কৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়টি জেনে চালকদের সতর্ক করে দিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা নিজেদের উদ্যোগে তৎপরতা চালিয়ে ছিনতাই ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। কিন্তু পিতলের বারকে স্বর্ণের বার বলে প্রতারণার ঘটনা প্রথম শুনেছি। আমরা চালকদের এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে বলবো।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, আমরা এর আগেও অটোরিকশায় ছদ্মবেশে যাত্রীদের সাথে প্রতারণার খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর পাঠানটুলা এলাকা থেকে আমরা এরকম দুটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছি। এই চক্রটিই হয়তো আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। আমরা বিষয়টি গুরত্বের সাথে দেখছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close